শ্বাসরোধে যুবক হত্যা, তিন বন্ধুর যাবজ্জীবন
লক্ষ্মীপুরে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করার পর গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে মেহেরাজ হোসেন নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় তিন বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
একই সঙ্গে রায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বৃষ্টি নামে একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে মেহেরাজকে হত্যা করা হয়। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আবদুল্লাহ আল মামুন, সজিব আহম্মদ ও তানভীর হোসেন বিজয়।
মামুনের বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম থানার উত্তর হুগলি গ্রামে, সজিবের বাড়িও একই থানাধীন মাতাহাপুর গ্রামে এবং বিজয়ের বাড়ি রাওয়ালদিয়া গ্রামে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামুনের সঙ্গে নোয়াখালী সদর উপজেলার বৃষ্টি নামে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভিকটিম মেহেরাজও ওই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। বিষয়টি জেনে মামুন তার বন্ধু সজিব ও বিজয়কে ডেকে নিয়ে মেহেরাজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এজন্য সজিব ও বিজয়কে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মামুন। পরে মামুন কৌশলে লক্ষ্মীপুরের চরশাহী ইউনিয়নের দাসেরহাট এলাকা থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে বলেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘোরাফেরা শেষে সন্ধ্যায় মেহেরাজ নোয়াখালীর উদয় সাদুর হাটে যান। সেখানে মামুন একটি বস্ত্র বিতানে চাকরি করতেন। সেখানে গেলে মেহেরাজকে সজিব ৫০০ টাকা দেন। একপর্যায়ে মামুন ও সজিব স্থানীয় একটি ফার্মেসি থেকে নেশা জাতীয় ওষুধ, কনফেকশনারী দোকান থেকে পাঁচটি স্পিড (কোমল পানীয়) ও দুটি বস্তা কিনেন। পরে একই মোটরসাইকেলে করে মামুন, সজিব, বিজয় ও মেহেরাজ মুন্সি তালুক গ্রামে একটি ধানক্ষেতের পাশে গিয়ে বসেন। সেখানে স্পিডের সঙ্গে নেশাজাতীয় ওষুধ মিশিয়ে মেহেরাজকে খাওয়ানো হয়। পরে পূর্বপরিকল্পিত মতো কোমড়ের বেল্ট গলায় প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তারা মেহেরাজকে হত্যা করেন। এরপর মরদেহ বস্তাবন্দি করে মামুন ও বিজয় লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামের টক্কারপুল এলাকায় একটি সেতুর নিচে ফেলে দেন।
এদিকে মেহেরাজকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি তার ভাই মাহবুবুর রহমান সুধারাম থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে টক্কারপুল সেতুর নিচ থেকে দাসেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মেহেরাজের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে ২ মার্চ মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০২০ সালের ৩০ মে তদন্তকারী কর্মকর্তা চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজ উদ্দিন আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ আদালত এ রায় দেন।