শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বেদিজুড়ে করা হয়েছে আল্পনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সড়ক, দেয়ালে বর্ণমালা ও চারুকর্মের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষার শক্তি।
এদিকে, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেওয়া হয়েছে রুটম্যাপও। একই সঙ্গে ওই এলাকা ও আশপাশের হোটেল-মেসে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
আজ রোববার সকালে শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ আশপাশের রাস্তা ও রাস্তার পাশের দেয়ালে দেখা যায় ‘অ আ ক খ’, ‘মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলাভাষা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ এ ছাড়া শোভা পাচ্ছে গান, কবিতা ও স্লোগান।
আল্পনা আর লেখায় লাল-কালোয় সেজে উঠেছে পুরো এলাকা। মূল বেদিসহ পুরো চত্বর নতুন করে রং করা হয়েছে। বাদ পড়েনি গাছের গোড়া। ঝাড়ু ও ধোয়ামোছা প্রায় শেষ।
কাউকে মিনারের আঙিনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারদিকে সিসিটিভি স্থাপন করা হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেউ পাস ছাড়া ঢুকতে পারবে না। সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রক্টরিয়াল টিম টহল দেবে।
ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গতকাল শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো ঘটতি থাকবে না।’
মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ইউনিফর্মে পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি, র্যাব, ও সোয়াটের টিম থাকবে। ছয় স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলতে পারেন।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা আলাদা আলাদাভাবে বসেছি। তাঁরা থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। কোনো সংস্থা থেকে এখন পর্যন্ত ঝুঁকির কথা পাওয়া যায়নি।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশের রাস্তা
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাইকে পলাশী ক্রসিং ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে অনুরোধ করা হলো। কোনোক্রমেই অন্য কোনো রাস্তা ব্যবহার করে শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার রাস্তা
শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা অথবা রোমানা চত্বরের রাস্তা দিয়ে বের হতে পারবেন। কোনোক্রমেই প্রবেশের রাস্তা দিয়ে বের হওয়া যাবে না।
যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে
১. বকশিবাজার-জগন্নাথ হল ক্রসিং সড়ক।
২. চাঁনখারপুল-রোমানা চত্বর ক্রসিং সড়ক।
৩. টিএসসি-শিববাড়ি মোড় ক্রসিং।
৪. উপাচার্য ভবন-ভাস্কর্য ক্রসিং।
ডাইভারশন ব্যবস্থা
ক. ১৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা পর্যন্ত রাস্তায় আলপনা অঙ্কনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আশপাশের রাস্তা বন্ধ থাকবে। এ সময় শিববাড়ি, জগন্নাথ হল ও রোমানা চত্বর ক্রসিংগুলোতে গাড়ি ডাইভারশন দেওয়া হবে।
খ. ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যত্রতত্র অনুপ্রবেশ বন্ধের লক্ষ্যে নীলক্ষেত, পলাশী মোড়, ফুলার রোড, বকশীবাজার, চাঁনখারপুল, শহীদুল্লাহ হল, দোয়েল চত্বর, জিমনেশিয়াম, রোমানা চত্বর, হাইকোর্ট, টিএসসি, শাহবাগ ইন্টারসেকশন রোড ব্লক দিয়ে গাড়ি ডাইভারশন দেওয়া হবে।
গ. ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টায় সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট ক্রসিং, কাঁটাবন ক্রসিং থেকে নীলক্ষেত ক্রসিং এবং ফুলবাড়িয়া ক্রসিং থেকে চাঁনখারপুল ক্রসিং পর্যন্ত প্রভাতফেরি উপলক্ষে সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে বন্ধ থাকবে ঢাকার যেসব সড়ক
গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা
ক. একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়াম মাঠে ভিআইপি গাড়িগুলো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
খ. অন্যরা নীলক্ষেত-পলাশী, পলাশী-ঢাকেশ্বরী সড়কে তাদের গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন।
সাধারণ নির্দেশনাবলী
ক. বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কবরস্থান ও শহীদ মিনারে যারা শ্রদ্ধার্ঘ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন, তারা অনুগ্রহ করে মাস্ক পরিধান করবেন।
খ. কবরস্থান ও শহীদ মিনারে যারা শ্রদ্ধার্ঘ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন, তারা অনুগ্রহ করে অন্যদের অসুবিধার কথা ভেবে রাস্তায় বসা বা দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
গ. সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার জন্য ওপরে বর্ণিত রাস্তায় কোনো প্রকার প্যান্ডেল তৈরি না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
ঘ. শহীদ মিনারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
ঙ. শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে প্রচার করা নির্দেশনা নাগরিকদের মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হলো।
চ. কোনো ধরনের ব্যাগ সঙ্গে বহন না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
ছ. যেকোনো পুলিশি সহযোগিতার প্রয়োজনে শহীদ মিনার এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।