শ্রীনগরে স্ত্রীকে হত্যার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে হত্যার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। আজ রোববার মুন্সীগঞ্জ আমলী আদালতে (শ্রীনগর থানা) অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আজগর হোসেন।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে পারভীন বেগমের স্বামী ওয়াহিদ মুন্সী প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত বুধবার গভীর রাতে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে খুন এবং তাঁকে তুলে নেওয়ার নাটক সাজান। পরে রাত ৪টার দিকে বাড়ির পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। আর সকাল ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রীর গলাকাটা লাশ পাওয়া যায় আড়িয়ল বিলে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় স্বামী অহিদুল মুন্সীকে আটক করে পুলিশ। পরে মুন্সীগঞ্জ আদালতে অহিদুল মুন্সী তাঁর স্ত্রীকে হত্যা ও নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ অভিযানে নামে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ স্ত্রী হন্তারক স্বামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে আসামি স্ত্রী হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আদালতে। একই সঙ্গে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাঁচি ও রক্তমাখা জামা জব্দ করে। পরে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জ জেলায় আর কোনো হত্যাকাণ্ডের মামলায় এত দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাত্র ৭ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য কাঁচি দিয়ে গলা কেটে স্ত্রীকে হত্যা করেন স্বামী। গত বুধবার গভীর রাতে উপজেলার বানিয়াবাড়ি বাঘাডাঙ্গা এলাকার ভ্যানচালক অহিদুল মুন্সী তাঁর স্ত্রী পারভীন বেগমকে সুকৌশলে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য স্ত্রীর সঙ্গে নিজেও অপহৃত হয়েছিলেন বলে নাটক সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
গত শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে শ্রীনগর থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আসাদুজ্জামান প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে স্ত্রী পারভীন বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন অহিদুল। গত বুধবার রাতে স্ত্রীকে সুকৌশলে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আড়িয়লবিল সংলগ্ন কামলাডাঙ্গার বিলে নিয়ে যান। সেখানে রাত ২টা ৩৫ মিনিটে স্ত্রী পারভীন বেগমকে কাঁচি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেন। লাশ গুম করতে বিলের একটি পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পরে অহিদুল মুন্সী বাড়িতে এসে গায়ের জামা কাপড় পাল্টে এলাকায় বলাবলি করেন প্রতিবেশী রাজা মিয়ারা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে তুলে বিলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। তিনি কোনোমতে পালিয়ে এসেছেন। পরে খবর পেয়ে শ্রীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পারভীন বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এএসপি আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এ ঘটনায় পাভীন বেগমের ভাই বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে তা মামলায় রূপান্তরিত হয়। শ্রীনগর থানার মামলা নম্বর ৫। আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিলের পুকুর থেকে ধারালো কাঁচি, লুকানো জামা কাপড়, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেদায়াতুল ইসলাম ভূঞা, পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আসগর আলী।
অহিদুল মুন্সী ও পারভীন বেগম দম্পতির সম্পা (১৬), মিম (৮), জান্নাত (৪) নামে তিন মেয়ে ও ইয়াসিন (১২) নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদের বড় মেয়ে সম্পার আট দিন আগে বিয়ে হয়েছে।