সংখ্যালঘু হত্যার বিচার চাই, হামলার ক্ষতিপূরণ চাই : মির্জা ফখরুল
‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তারা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃস্টান- সবার ওপর হামলা করে’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা সংখ্যালঘুদের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ চাই, যারা খুন হয়েছে তার বিচার চাই। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ হাজার বছর এখানে একসঙ্গে বসবাস করছে।’
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাম্প্রদায়িক সহিংতাবিরোধী সমাবেশে বিএনপিনেতা এসব কথা বলেন। বক্তব্য শেষে মিছিল বা সমাবেশ না করে নেতাকর্মীদের যে যেখান থেকে এসেছেন চলে যেতে নির্দেশ দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করছি না।’
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ র্যালি করে প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাব। কিন্তু সকাল থেকে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণের আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজ সরকার দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। এসব করছে তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে। আমরা সব সময় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কাজ করি আর এই সরকার ক্ষমতায় আসলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। আজ আওয়ামী লীগকে জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আজ আওয়ামী লীগের পতন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সরকার একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দুর্গাপূজার মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে সেটা ভাইরাল করে একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ যখন জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন সরকার এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনের বাধ্য করব। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে অপমান করছে এই সরকার। আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে সিরিজ হামলা চালিয়েছে। আজকের সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের সন্ধ্যার মধ্যে মুক্তি না দিলে লড়াইটা জনগণের সঙ্গে পুলিশের হবে। আমি বলব, পুলিশের দায়িত্ব পুলিশ পালন করবে। আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সংঘাত নেই, পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘাত করবেন না।’
গয়েশ্বর অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শরীরে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। দেশে উনার চিকিৎসা হচ্ছে না, অথচ শেখ হাসিনা তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না।’
নেতাকর্মীদের রাজপথে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘সময় সুযোগ পাবেন না, আপনারা প্রস্তুত থাকুন, যে কোনো সময় আন্দোলনের ডাক আসবে, আজকের মতো সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ আন্দোলন-সংগ্রাম, এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই৷ এটাই একমাত্র পথ। গত কয়দিনে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা আপনারা দেখেছেন। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, যারা জোর করে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে, এটাই তাদের একমাত্র পথ, তারা এ ধরনের কাজ করে। এরশাদের যখন পতন হয়েছে তখনও মন্দিরে হামলা হয়েছে, তখনও এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। এবারও মন্দিরে হামলা করে গদি টিকিয়ে রাখা যাবে না। আপনাদের এই খেলা বন্ধ করেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিন, এ ছাড়া আপনাদের আর কোনো পথ নেই।’