সংবাদকর্মীরা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন : এম আবদুল্লাহ
‘সরকারের অনুগত কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিক ছাড়া বেশিরভাগ সংবাদকর্মী আজ নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন’ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম আবদুল্লাহ। আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের (জেইউএম) ত্রিবার্ষিক সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মতামত ব্যক্ত করেন।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বেকারত্ব আর অভাব-অনটনে শত শত সাংবাদিক পরিবারে চলছে হাহাকার। এই রমজানে বহু সাংবাদিক পরিবারের পাতে মাছ-মাংস উঠবে না। সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। এ দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গণমাধ্যমের শত্রু সরকারকে বিদায় করে গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা ফেরাতে হবে।’
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেইউএমের সভাপতি আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সাধারণ সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. মোফাখখারুল ইসলাম রানা।
সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। আর্থিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ নজীব আশরাফ হোসেন।
রিপোর্ট দুটির ওপর আলোচনা শেষে অনুমোদন করা হয়।
এম আবদুল্লাহ সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে যেমন সাংবাদিকেরা নিরাপদ নয়, তেমনি নিজের বেডরুমেও সংবাদকর্মীরা নিরাপত্তাহীন। তার প্রমাণ শিশু সন্তানের সামনে সাগর-রুনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। কর্মস্থলে সাংবাদিকরা নিরাপদ নন, তার প্রমাণ কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলকে নিজ অফিস থেকে ডেকে নিয়ে খুন। ১৪ বছরে ৫৪ জন সাংবাদিক খুনের দায় সরকার এড়াতে পারে না।’
বিএফইউজে সভাপতি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে কয়েক দিন আগে বানোয়াট এক মামলায় ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক কামরুল হাসান দর্পণকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ধরে নিয়ে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে সিনিয়র ফটো সাংবাদিক আবদুল আজিজ ফারুকীকে। গণতন্ত্রের মুখপত্র দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঠুনকো অজুহাতে।’
এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা ছাড়া সাংবাদিক খুন-নির্যাতন ও গণমাধ্যমে বিরাজমান অস্থিরতার অবসান হবে না, হাজারো সাংবাদিকের দুর্দশা, বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীনতা ঘুচবে না।’
‘কোনো সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো কিংবা কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো সাংবাদিকদের কাজ নয়’ মন্তব্য করে এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সাংবাদিকেরা বরাবরই লড়াই করেছেন। কারণ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না। আর স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ না থাকলে সংবাদমাধ্যম ভঙগুর হয়ে পড়ে, অরাজকতা বিরাজ করে। বাংলাদেশে এখন সত্যিকারের সাংবাদিকতা অনুপস্থিত।’
বিএফইউজে সভাপতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘সাংবাদিক সমাজকে দমন-নিপীড়ন চালিয়ে কোনো স্বৈরাচারী সরকার টিকতে পারেনি।’ এ সময় ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যও সাংবাদিকদের সংগ্রাম করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন বলেন, ‘সাংবাদিক সমাজকে শৃঙ্খলিত করার জন্যে গণমাধ্যমকর্মী আইন, প্রেস কাউন্সিল আইনের সংশোধন, ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। অনির্বাচিত সরকার আবার ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করছে। ভোটাধিকার ফিরাতে আমরা সংগ্রাম করছি।’