সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে খেয়াল রাখুন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, দেশে ১৮ বছরের নিচে সবাইকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি নিয়ে এখন চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মধুবাগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের আওতায় ‘সবার হোক একটাই পণ, কিশোর অপরাধ করবো দমন’ শীর্ষক টিভিসি উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমি যখন এসএসসি পাস করি তখন আমার বয়স ছিল ১৫ বছর। বর্তমানে যারা নিয়মিত পড়াশোনা করেন ১৮ বছর বয়সে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। আমাদের মনে হয়, শিশুদের ১৮ বছরের এ সময়সীমা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। আন্তর্জাতিক একটি আইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় সমন্বয় করে এটি করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে কিশোর অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেগ পেতে হচ্ছে, তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, এটি ধরে রাখার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা। কিন্তু আমাদের কিশোররা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের শঙ্কার বিষয় ছিল কোভিডকালীন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে, সবাই বসে থাকবে। তবে এ সময়ে কিশোরদের নিয়ে যে শঙ্কাটা ছিল ততখানি হয়নি, আমাদের দেশ অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতই কড়াকড়ি হোক আমরা হারিয়ে যাব। তাই সময় থাকতে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে খেয়াল করুন। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তবে আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রতি যদি খেয়াল না রাখেন তাহলে এটি আমরা কখনোই পারব না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, তিন বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রেক্ষাপটে কিশোর গ্যাং একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ফলে তিনি কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুনভাবে ভাবার আহ্বান জানান।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সংসদে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন হচ্ছে। আদালতও অনেক নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে কিশোর আইনও হালনাগাদ হয়েছে। সে হিসেবে একজন ব্যক্তি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে আইন চেঞ্জ করার কারণে যেটা হয়েছে তাতে যে যুবকে পরিণত হয় তাকেও শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’
‘বর্তমানে আইন অনুযায়ী, কিশোর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাদেরকে সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে। সংশোধনাগারের সংখ্যাও কম। ফলে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে’, যোগ করেন বেনজীর আহমেদ।
র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।