সন্ত্রাসীদের হামলায় এসএ টিভির তিন সাংবাদিক আহত
নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে শহরের নওগাঁ ডিগ্রি সরকারি কলেজে ঢুকে জোর করে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধর ও ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হন এসএ টিভির সাংবাদিকসহ তিনজন।
আহতরা হলেন এসএ টিভির স্টাফ রিপোর্টার হেদায়েত উল্লাহ সীমান্ত, নওগাঁ প্রতিনিধি তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যামেরা পারসন শহিদুজ্জামান।
১ নম্বর ওয়াডের নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজ পুরুষ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আল হাসিব পরাগ বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে বুথের ভেতর ঢুকে পড়ে কিছু দুর্বৃত্ত। এ সময় তারা জোর করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তারপর আর কোনো গোলযোগ হয়নি।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বরুণকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে জোর কেরে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে প্রায় আধাঘণ্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। পরে আবার ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে।
স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল অভিযোগ করেন, ‘সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চললেও দুপুরের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা নওগাঁ ডিগ্রি সরকারি কলেজ, চকগরীব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরজি নওগাঁ উচ্চবিদ্যালয়, সুলতানপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে জোর করে ঢুকে পড়ে ব্যালটে সিল মেরেছে। এ ঘটনার পর নির্বাচনকে আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা চলে না। কেন্দ্র দখল করে জোর করে সিল মারার ঘটনায় কেন্দ্রে উপস্থিত আমার কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
বিএনপির প্রার্থী নজমুল হক সনি বলেন, ‘সকাল থেকে যেভাবে ভোটাররা যেভাবে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিচ্ছিল। পরাজয় নিশ্চিত জেনে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের কর্মী-সর্মথকেরা নৌকা মার্কায় সিল মারে। অভিযোগ পাওয়ার পরেও পুলিশ যথাযথ সময়ে ভূমিকা পালন করেনি। তার পরও জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোনো গোলযোগ হয়নি। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে জোর করে ব্যালটে সিল মারার যে অভিযোগ করেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
নওগাঁর পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ‘পৌরসভার ৪১টি কেন্দ্রের মধ্যে দুই-তিনটি কেন্দ্রে দুপুরের দিকে গোলযোগ করার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বড় ধরনের কোনো গোলযোগ হয়নি। কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতও করা হয়নি। ভোটগ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে।’
নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন, ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিল পদে ৫৭ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজমুল হক সনি, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, জাতীয় পার্টির ইফতারুল ইসলাম বকুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আতিকুল ইসলাম।
এদিকে, একই দিন নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ধামইরহাট পৌরসভায় বড় ধরনের কোনো গোলযোগের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে পৌরসভার ৪ নম্বর মালাহার দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমাইতাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকেরা জোর করে ব্যালটে সিল মারে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অন্তত এক হাজার ব্যালটে জোর করে সিল মেরেছে।’
ধামইরহাট পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ধামইরহাটে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুটি কেন্দ্রে একজন মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকেরা জোর করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা হতে দেয়নি। এই পৌরসভায় ৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে।’
নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সর্বশেষ এখন নওগাঁর পৌরসভার ৪১টি কেন্দ্রে ও ধামইরহাট উপজেলার ৯টি কেন্দ্রে ভোট গণনা চলছে।