সরকারকে হঠাতে না পারলে গণতন্ত্র আসবে না : মান্না
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান সরকার গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই নয়, সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে।
বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে মান্না বলেন, সরকারের অপশাসনে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ সরকারকে হঠাতে না পারলে দেশ বাঁচানো যাবে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, এটা না পারলে অন্তত এরশাদবিরোধী আন্দোলনের ন্যায় যুগপৎ আন্দোলন করতে পারে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে (তৃতীয় তলা) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় মান্না এ কথা বলেন।
‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট কলাম লেখক ফরহাদ মজহার, বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সহসভাপতি শাহীন হাসনাত ও রাশেদুল হক, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এ এক এম মহসীন প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার।
মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি ইসরায়েলে সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, দেশে এখন পুলিশি শাসন চলছে। কোথাও আওয়ামী লীগের শাসন নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে এ সরকারকে বিদায় করতে সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।
সমাজচিন্তক ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার দেশে গুম হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান নেই উল্লেখ করে বলেন, যারা এ সরকারের বিরোধিতা করছে তারাই গুমের শিকার হচ্ছেন; আইন বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চেতনা যতো দৃঢ় হচ্ছে সরকারের দমননীতি ততো জোরালো হচ্ছে।
সর্বশেষ ইসলামী বক্তা আদনান গুমের বিষয়টি উল্লেখ করে ফরহাদ মাজহার বলেন, আদনানের বক্তব্য তরুণদের আকৃষ্ট করার কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকার তাঁকে গুম করেছে। গণআন্দোলন ও গণবিক্ষোভ জনগণের অধিকার। কিন্তু এ সরকার সেটি হরণ করেছে। তিনি বলেন, গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
আওয়ামী লীগকে সভ্যতা বিনাশী দল উল্লেখ করে শওকত মাহমুদ বলেন, সভ্যতা ফিরে পেতে চাইলে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। তিনি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে বলেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালাকানুনন করে বাক স্বাধীনতা হরণ করতে চায়।
সভাপতির বক্তব্যে এম আব্দুল্লাহ বলেন, ১৯৭৫-এর ১৬ জুন সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ‘কালো দিবস’ পালন করা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে গাঢ় কালো দিবস কোনটি সেটি এখন বাছাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বন্ধ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন, দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও বয়োবৃদ্ধ সম্পাদক আবুল আসাদ এবং ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, গত ১২ বছরে শত শত কালো দিবস তৈরি করেছে এ সরকার। এ সরকার গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না।
বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার স্বার্থে এ সরকারকে বিদায় করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গতে তুলতে হবে।
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পেতে হলে বহুদলীয় ক্রিয়াশীল গণতন্ত্র থাকতে হবে।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ছিল সংবাদপত্র বিহীন একটি অন্ধকার দিন। সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার হরণের দিন। সরকারের মতের বিরুদ্ধে সামান্য মন্তব্যের কারণে তৎকালীন শেখ মুজিবের সরকার আবদুস সালাম, এনায়েতউল্লা খান, হাসান হাফিজুর রহমান, তোয়াব খানের মতো প্রথিতযশা সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত ও নির্যাতন করেছে। কবি ফররুখ আহমেদের মতো বরেণ্য কবি মারা যাওয়ার পর তাঁকে কবর দেওয়ার জায়গা দিতে রাজি হয়নি ওই ফ্যাসিস্ট সরকার।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা বিনা ভোটের সরকার এখন ভিন্নভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সরকারকে বিদায় করা না গেলে মুক্তি মিলবে না।