সাংবাদিকদের জন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করতে হবে
দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সংবাদপত্রের নীতি-নৈতিকতার গতি সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের জন্য দুর্ভাগ্য।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভা ও প্রেসক্লাব নেতাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
সিইউজের সভাপতি মো. আলীর সভাপতিত্বে সম্মাননা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ, সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটো প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতার কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, ‘চট্টগ্রামে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের সামনে নিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা কখনও এত বেশি হয়ে যায় যে, যার কারণে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। সেগুলো নিরসনে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।’
এ সময় প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উপমন্ত্রী বলেন, ‘একদিনের নির্বাচন বা গণতন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর কোনো দেশেই সামগ্রিক গোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত হয়নি। উন্নয়ন তখনই হয়, যখন প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, জনসেবা নিশ্চিত করতে পারে এবং জবাবদিহিতা সঠিকভাবে হয়। এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কাজটিই সাংবাদিকরা এগিয়ে নিচ্ছে।’
দেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূঁইফোড় সংবাদমাধ্যম বাড়ছে জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক সমাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সরকারকে চিন্তা করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ও অনিবন্ধিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ খুলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, ‘বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে। এর কারণ দেশের গণমাধ্যম পুরোপুরি বিজ্ঞাপননির্ভর। অথচ প্রতিবেশী দেশেও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো সাবস্ক্রিপশন ফি আদায় করে এবং এর একটি অংশ সাংবাদিকদের দিতে পারছে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশে বড় প্রতিষ্ঠানে ৪৯ শতাংশের বেশি উদ্যোক্তা মালিকানা দেওয়া হয় না। পত্রিকার ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকে সাংবাদিকদের। দেশে এ ধরনের কঠোর নীতিমালায় না এলে সংবাদিকতার পেশাটা সমাজের প্রভাবশালী বা বিত্তশালীদের হাতে আবদ্ধ হয়ে যাবে।’
পরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।