সাংবাদিকরা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন : টিটিই শফিকুল
রেলমন্ত্রীর আত্মীয়র বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ এবং তাদের জরিমানা করে বরখাস্ত হওয়া সেই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম কর্মস্থলে ফিরেছেন। স্বপদে ফিরে আজ সোমবার শফিকুল ইসলাম নিজ দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল রোববার পুনর্বহালের আদেশ হলেও আজ আদেশের কপি হাতে পাওয়ার ডিআরএম স্যার বরাবর কাজে যোগদানের আবেদন করি। আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে আমার নিজ অফিসে চলে আসি।
শফিকুল আরও বলেন, এখনও আমি কোনো ট্রেনের দায়িত্ব পাইনি। তবে আমি অফিসেই অবস্থান করছি। আশা করছি আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে হয়তো কোনো ট্রেনে ডিউটি পাব। ডিউটি পাওয়ার সঙ্গেই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথারীতি পালন করব ইনশাআল্লাহ।
সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আলোচিত এই টিটিই বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) ধন্যবাদ দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই। আমি সারা জীবন আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আপনারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’
এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত এই ঘটনায় তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের শুরুতেই টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এদিন নিজ ক্ষমতাবলে টিটিইর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহাল করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি বরখাস্তকারী পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করেন। তাঁকে আগামী সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমানডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে এসি রুমে ওঠেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে তিন যাত্রী। মাঝপথে তাঁদের বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের দায়ে জরিমানা করে সাময়িক বরখাস্ত হন টিটিই শফিকুল ইসলাম।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সমালোচনা সৃষ্টি হলেও ওই তিন আত্মীয় পরিচয় অস্বীকার করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়; ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ রেলমন্ত্রী পরিচয় অস্বীকার করলেও সরেজমিনে গিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
ট্রেনযাত্রীরা হলেন, রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মি আক্তার মনির দুই মামাতো ভাই ওমর ফারুক ও হাসান আলী এবং অপরজন মামাতো বোনের ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত। ওমর ফারুক ও হাসান আলীর বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীর শহরের নুর মহল্লায়, আর প্রান্ত ঈশ্বরদীর ফতেহ মোহাম্মদপুর এলাকায়।
ঘটনার মূল অভিযুক্ত প্রান্তর মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আক্তার মনির খুবই ঘনিষ্টজন। মনি ঈদুল ফিতর তার বাসায় উদযাপন করেছেন। এসব ঘটনার পর স্বল্প সময়ে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করান।