সাংবাদিক পেটাল আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়রের ভাই
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন পৌর মেয়রের ভাই ও তার অনুসারীরা। আজ সোমবার দুপুরে আলফাডাঙ্গার স্থানীয় পরিবহণ বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। মুজাহিদ ঢাকাটাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আলফাডাঙ্গার পৌর মেয়র সাইফুর রহমান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আহত সাংবাদিক মুজাহিদ জানান, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান ও তার পাঁচ-ছয়জন সহযোগীরা হঠাৎ করে হামলা চালায়। তারা লোহার রড, স্ট্যাম্প, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পেটায়। এ সময় স্থানীয়রা হামলাকারীদের হাত থেকে তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
আলফাডাঙ্গা থানার পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে; যিনি সাংবাদিক মুজাহিদকে মারধরে সহযোগিতা করেছিলেন। তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহণের কাউন্টারে টিকেট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকার একটি টিকেটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি জানিয়ে নাঈমের সহযোগিতা চান রমিজ।
ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মীমাংসা করার কথা বলতেই সাংবাদিক মুজাহিদের সঙ্গে তর্কে জাড়ান কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। তকাতর্কির একপর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের উপরও চড়াও হন জাপান ও সহযোগিরা। জাপান স্থানীয় পৌর মেয়র সাইফারের ছোট ভাই।
আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মুজাহিদকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। পরে এক্স-রে করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান৷’
সাংবাদিক মুহাজিদকে এমন মারপিট করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলার জন্যই এমন দাবি করে স্থানীয় এই সাংবাদিকনেতা বলেন, ‘স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ই্উএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করা হয়েছে।’
এদিকে স্থানীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
এ বিষয়ে মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, ‘ঘটনা জানার পর পরই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়ে ফরিদপুরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) অতুল সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আলফাডাঙ্গার ইউএনওকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’