সাংবাদিক রোজিনা ন্যায়বিচার পাবেন : আইনমন্ত্রী
প্রথম আলোর কারাবন্দি সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, মামলাটি খতিয়ে দেখতে প্রসিকিউশনকে বলা হবে। আজ মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রীর বাসায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সচিবালয় বিটের সাংবাদিক নেতারা দেখা করতে গেলে তিনি এমন আশ্বাস দেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি এটুকু বলব যে এ রকম একটা ঘটনায় সরকার এবং সাংবাদিকদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হোক, এ রকম কোনো কাজ সরকার নিশ্চয়ই, এ রকম যদি কোনো সন্দেহ থাকে সেটা দূরীকরণের জন্য সরকার চেষ্টা করবে। আমিও প্রসিকিউশনকে মামলাটা খতিয়ে দেখার জন্য বলব। ন্যায়বিচার অবশ্যই পাবে, এটুকু আমি আপনাদের বলতে পারি।’
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে ৯টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
গভীর রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয় নথি চুরির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং ওই নথি দ্বারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়।
গতকাল রাত থেকে সাংবাদিকেরা থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। নানা নাটকীয়তার পরে আজ মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আদালতে পাঠিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে থানা পুলিশ। পরে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পর দিনভর সারা দেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন সাংবাদিকেরা। এ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ বিকেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সাংবাদিক শাহবাগ থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে আবেদন করেন। তাঁদের দাবি, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হোক।
থানায় অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকেরা স্বেচ্ছায় কারাবরণের আবেদন জমা দিয়ে বলেছেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই একই অভিযোগ যেকোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনা যায়। সে কারণে রোজিনা ইসলামকে কথিত যে দোষে দোষী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এমন অসংখ্য অভিযোগ থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও আনা যায়। কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা জনস্বার্থে এমন গোপন নথির মাধ্যমে দুর্নীতি উন্মোচন করে থাকেন। তাই তাঁরা স্বেচ্ছায় কারাবরণের আবেদন নিয়ে থানায় হাজির হয়েছেন।
শাহবাগ থানা পুলিশ তাঁদের আবেদনগুলো জমা নিলেও তা আইনানুগ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে এ ধরনের সুযোগ নেই। আমরা এগুলোর চর্চাও করি না। আর কারাগারে পাঠানোর কর্তৃপক্ষ তো আমরা নই। এ জন্য যোগাযোগ করতে হবে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তবে আমরা আবেদনপত্রগুলো দেখেছি। পড়েছি। আমাদের কাছে জমা আছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলব।’
এ ছাড়া রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে আজ রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকেরা।