সাগর-সুন্দরবনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, বন্ধ পর্যটনবাহী নৌযান
মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২০ মে থেকে বঙ্গোপসাগরে ও সুন্দরবনে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগ। ফলে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ শিকার করতে পারবেন না জেলেরা।
প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন রাখতে আগামী ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলও। তাতে তিন মাস বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন-ভ্রমণ।
বছরের বিভিন্ন সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারেন না সাগর এবং সুন্দরবনে। তারমধ্যে আবার দুযোর্গ তো রয়েছেই। ফলে বছরের বেশির ভাগ সময় কাটে উপকূলের জেলেদের খেয়ে না খেয়েই। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানসহ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার মতো সরকারি সাহয়তার আবেদন জানিয়েছেন উপকূলের জেলেরা। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়া বেশির ভাগ জেলেকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবনজীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে নেমে পড়তে হয় সাগর-সুন্দরবনে। উপকূলের জেলেদের সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করা গেলে প্রজনন মৌসুম যেমনি নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি মাছ ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মোংলার চিলা ও কলাতলা এলাকার সমুদ্রগামী এবং সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে ইয়াসিন সরদার, সোবহান শেখ, মোহন বাছাড় ও ফারুক শেখ বলেন, ‘বছরের বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। যখন একটু মাছ ধরার সময় পাই তখন আবার থাকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস। বেশির ভাগ সময়ই নৌকা, জাল নিয়ে ঘাটে বসে থাকতে হয়। মহাজনের কাছ থেকে দাদন বা ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল মেরামত করেছি। যাও মাছ পোনা হতো মহাজনকে কম-বেশি দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলত। এখন তিন মাসেরও বেশি সময়ের এ নিষেধাজ্ঞায় আমাদের তো না খেয়ে মরতে হবে। আমাদের তো জাল ধরা ছাড়া অন্য কোনো আয়ের পথ নেই। কোনো কাজ-কামও নেই যে তা করে খাব। সরকার যদি আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে পারব।’
মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে আগামীকাল শনিবার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এই সময়টাতে কোনোভাবেই জেলেরা সমুদ্রে মাছ আহরণ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সমুদ্রগামী নিবন্ধিত দুই হাজার ৬৪০ জন জেলের প্রত্যেককে দুই দফায় দেওয়া হবে ৮৬ কেজি করে চাল।’
এখানে নিবন্ধিত ছাড়াও সমুদ্রগামী আরও জেলে রয়েছে আড়াই হাজার। তাদের ভাগ্যে জুটবে না এ সহায়তা। মোংলায় সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক আর সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে রয়েছে পাঁচ হাজার। ফলে ১০ সহস্রাধিক জেলেকে এই নিষেধাজ্ঞাকালে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, ২০ মে থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের জারি করা সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বনবিভাগেও মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হওয়ায় এই সময়ে সুন্দরবনের নদী-খালে কোনো ধরনের মাছ শিকার করতে পারবে না জেলেরা। সেই সঙ্গে মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলও। কারণ নৌযান চলাচলে মাছের প্রজনন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত ও নৌযানের বিকট শব্দে বন্যপ্রাণীর বিচরণসহ প্রজনন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়ে থাকে। তাই সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকে তিন মাস ধরেই।