সাবেক এমপির হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন বর্তমান এমপি
অনেকদিন ধরেই নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর মধ্যে শীতল দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত শনিবার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম। এ ধরনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যার দিকে তা সংবাদমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে। তবে সে ঘটনা তেমন কিছু নয় উল্লেখ করে সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আজ এই মূহূর্তে আমরা উভয়ে একই মঞ্চে উপস্থিত থেকে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছি।’
জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলছিল। এ সময় মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ওই আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য মঞ্চে বসে থাকা আকরাম হোসেন চৌধুরীর দিকে মাইক্রোফোন ছুড়ে দিয়ে বলেন ‘নৌকার জন্য যখন আপনার এত ভালবাসা, তাহলে মাইক্রোফোন নিয়ে একটু বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কোথাও কারও জন্য ভোট চেয়েছেন কি না বা তার কোনো প্রমাণ কি দেখাতে পারবেন?’
এ সময় পাল্টা আকরাম হোসেন চৌধুরী মাইক্রোফোন নিয়ে বলেন, ‘ওই সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকায় আইনগত জটিলতায় কারনে ভোট চাইতে পারিনি।’
তখনই সংসদ সদস্য ছলিম তরফদার আকরাম হোসেন চৌধুরীর তার হাত থেকে মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেন। এ সময় আশপাশের উপস্থিত নেতাকর্মীরা হৈহুল্লোড় করতে থাকেন।
ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রকাশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সবাই বিলাশবাড়ী ইউনিয়নকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দাবি করে। তাহলে গত নির্বাচনে নৌকা কেন পরাজিত হল? ঘাঁটি হঠাৎ করে ভেঙে গেল কেন?’
সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম বলেন, ‘সেদিনের ঘটনা বড় কিছু নিয়ে নয়। অতীতের জমে থাকা ক্ষোভ থেকেই একটু এমনটা হয়েছে। এখন আমরা দুজন আবারও একই মঞ্চেই আছি। বক্তৃতা করছি।’
ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়াম লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচন হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হন বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম। সেই নির্বাচনে ছলিম উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছিলেন। প্রায় তিন বছর দলের বাইরে থাকার পর ২০১৬ সালের দিকে আবারও তাঁকে দলের অর্ন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদিকে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কৃর্তপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় এলাকায় টপ অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে ক্ষোভ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি বদলগাছী মহাদেবপুরের রাস্তাঘাট ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন করতে হলে বরাদ্দের প্রয়োজন হয় না। এর জন্য একজন এমপির তিনটি গুন থাকতে হবে। প্রথম হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পরিচিত হতে হবে। মানে বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাঁকে ভালোবাসতে হবে এবং তাঁর ভালোবাসা পেতে হবে, তাহলে মন্ত্রীরা ভালবাসবে, সচিবেরা ভয় পাবে।’ আরও বিভিন্ন প্রসঙ্গসহ স্থানীয় ইউপি নির্বাচন নিয়েও আকরাম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার আকরাম চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেখাদেখি শিক্ষা নিতে হয়। আমার ইচ্ছা ছিল আপনার সঙ্গে একবার নির্বাচন করা। আমি টিকিট চেয়ে পাইনি তারপরেও আল্লাহপাক তৌফিক দিয়েছিল জনগণ আমার ইচ্ছাপূরণ করেছিল ২০১৪ সালে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। যে কারনে আপনি আজ মাঠে মাঠে ঘুরছেন। শুধু নিজের জন্যে ভোট চাইবেন, না নৌকার জন্যে ভোট চাইবেন, তা দেখা যাবে আগামী নির্বাচনে। যদি অন্য কেউ টিকিট পায় তাহলে নৌকার ভোট করেন কিনা। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার ভোট করেননি, যদি করে থাকেন তাহলে জবাব দেন।’ এ কথা বলে ছলিম উদ্দীন তরফদার মাইক্রোফোন আকরাম চৌধুরীর হাতে দেন।
এ সময় আকরাম চৌধুরী বলেন, “তখন আমি বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার ভোট করা বারণ ছিল।” তৎক্ষণাৎ ‘নো’ বলে ছলিম উদ্দীন তরফদার প্রতিবাদ জানান। তখন তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন ছলিম উদ্দিন তরফদার। নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার। ওই অনুষ্ঠানের দুজনের বক্তব্যের অংশ বিশেষ ও মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বদলগাছী মহাদেবপুর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীসহ সবার মধ্যে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা চলছে।
সেদিন শিবপুর হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল্যাহ আল মাহেন মাহমুদ ওই দিনের ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কিশোর। তারাও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।