সারের দাম নিয়ে কৃষক-ডিলারের ভিন্ন কথা
ফরিদপুরে এবার আমন ধানের আবাদ বেড়েছে। তবে হঠাৎ করে খুচরা বাজারে ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। যদিও কৃষকদের এ দাবি অস্বীকার করছেন ডিলাররা। কৃষকরা যখন বলছে- সারের দাম বেড়েছে, তখন ডিলার বলছেন বাড়েনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় মাসিক ইউরিয়া সারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ হয়েছে অর্ধেক। অনেকেই আবার চড়া দামেও সার পাবেন কিনা তা নিয়েও শঙ্কিত। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের কারণে খুচরা বাজারের এর প্রভাব পড়েছে বলে জানায়িছেন ব্যবসায়ীরা।
ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামের কৃষক মো. নাসিম মোল্লা প্রতিবস্তা সার কিনেছেন ৯০০ টাকা দরে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে তিনি ইউনিয়নের উচা বাজার থেকে ওই সার কেনেন। এ সময় ১৬ টাকার জায়গায় প্রতি কেজির দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন ১৮ টাকা।
নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতী ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের কৃষক বরুণ মণ্ডল জানান, প্রতিবস্তা সার ৯২৫ থেকে ৯৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
সালথা উপজেলার আমনচাষী সুমন মণ্ডল বলেন, ‘হঠাৎ করে সারের চাহিদার পাশাপাশি দামও বেড়ে গেছে। তাই চাহিদা মতো সার কিনতে পারিনি। দাম কমলে সার কিনতে পারব। আর তা না হলে জমির চাহিদার থেকে কম পরিমাণ সার দিতে হবে। এ কারণে ফলন কমার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকার কৃষক নিজাম খলিফা জানান, বাজারে সারের ঘাটতি রয়েছে যে কারণে দর কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেশি। ফলে সার কিনেছি কম।
জানা গেছে, জেলায় সারের ডিলার আছেন ৯৬ জন। খুচরা সার বিক্রেতা আছেন ৭২৯ জন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফরিদপুরে বছরে ইউরিয়ার চাহিদা ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন।
শহরের টেপাখোলা মহল্লার খুচরা সার বিক্রেতা মেসার্স মৃধা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. লিটন মৃধা বলেন, ‘হয়তো ডিলারদের কারসাজিতে সারের দাম বাড়ছে। উপায় না পেয়ে কৃষকরা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে।’
স্থানীয় ডিলার আবু সাঈদের ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন জানান, তাঁরা বেশি দামে সার বিক্রি করেন না। তবে মাঝেমধ্যে সারের সরবরাহ পেতে সমস্যা হয়।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর শাখার সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু বলেন, ‘ডিলার পর্যায়ে সারের দর কম-বেশি হয়নি, তবে খুচরা বাজারে কিছুটা দর বেড়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে জেলার ইউরিয়ার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন। এই কারণে হয়তো দামের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে ডিলার পর্যায়ে নয়, খুচরা বাজারে।’
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, এ জেলায় সারের সংকট হওয়ার কথা নয়। চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু সেখানে আবাদ হয়েছে ৭০ হাজার ২৯৪ হেক্টর।
ড. হযরত আলী আরও বলেন, ‘চারা রোপণের সময় সার কীটনাশকের দাম স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু কয়েকদিন হলো হঠাৎ করেই খুচরা বাজারে ইউরিয়ার সারের দাম কিছু বেড়েছে। তবে এই দর বেশিদিন থাকবে না। আমন মৌসুমে আগস্ট মাসের ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল পাঁচ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদা চার হাজার ৫০২ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন।’