সিনহা হত্যা মামলার চার্জ গঠন ও দুই আসামির জামিন শুনানি আজ
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জ গঠন এবং দুই আসামি—টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল সাগর দেবের জামিন শুনানি আজ রোববার। এরই মধ্যে প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁদের কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত আলোচিত সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জ গঠন ও দুই আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল সাগর দেবের জামিন শুনানির ধার্য তারিখ আজ। এ কারণে ওই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৫ জন আসামিকে আদালতে আনা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ও পলাতক আসামি বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ঘটনার ১০ মাস ২৫ দিন পর বৃহস্পতিবার টেকনাফ থানার সাবেক এই কনস্টেবল অনেকটা চুপিসারে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। জামিনের পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য রোববার দিন রাখেন আদালত।
একইদিন ওসি প্রদীপ ও এএসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের জামিনের শুনানিও ধার্য করা হয়। গত ১৩ জুন এই দুই আসামি জামিনের আবেদন করেছিলেন। তার আগে গত ১০ জুন ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগার থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে আসা হয়। তবে এএসআই নন্দদুলালের জামিন শুনানি আজ রোববার হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে।
কনস্টেবল সাগর দেবের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই এখন কারাগারে। একমাত্র তিনিই পলাতক ছিলেন। ওসি প্রদীপের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ সাগরকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানাও জারি করেছিলেন আদালত।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান।
হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় ২ নম্বর আসামি। মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে।
এরপর আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করে (র্যাব)। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডটিকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জন আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। আজ কনস্টেবল সাগর দেবকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কারাগারে থাকা অন্য ১৪ আসামি হলেন—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
এ ছাড়া ঘটনার সময় মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা যে নীলিমা বিচ রিসোর্টে ছিলেন, সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে আটক করে। পরে তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিপ্রা দেবনাথকে রামু থানায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। আর সিফাতকে টেকনাফ থানায় করা হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার দুটি মামলা ও রামু থানায় করা মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সিফাত, শিপ্রা ও তাহসিন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের নিয়ে সিনহা মো. রাশেদ খান একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন।
৯ আগস্ট শিপ্রা ও ১০ আগস্ট সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের আদালত। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। পরে ১৩ ডিসেম্বর এই দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিমান চন্দ্র কর্মকার রামু ও টেকনাফ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের দায়ের করা দুই মাদক মামলার সত্যতা পাওয়া যায়নি।