সিনহা হত্যা মামলায় চতুর্থ দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চতুর্থ দফার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ১৫ নম্বর সাক্ষীর মাধ্যমে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ঘটনার দিন সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী ও ২ নম্বর সাক্ষী সাহেদুল সিফাত সাক্ষ্য দেন। পরে দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তৃতীয় দফায় তিন দিনে আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলায় ১৫ নম্বর সাক্ষীসহ আরও ৬৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
এর আগে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে নেওয়া হয়।
পিপি ফরিদুল বলেন, মামলার ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে আদালত নোটিশ দিয়েছেন। গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে মামলার বাদী ও ২ নম্বর সাক্ষী জবানবন্দি দেন। মামলায় দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তৃতীয় দফায় তিন দিনে সাক্ষ্য নেওয়া হয় সিনহার মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকসহ আটজন প্রত্যক্ষদর্শীর।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা গৃহবধূ ছেনুয়ারা বেগমের জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে চতুর্থ দফায় প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ মডেল থানায় কর্মরত থাকাকালে ছেনুয়ারার স্বামীকে তুলে নিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত দেখানোর অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আরও দুজন সাক্ষীকে উপস্থিত রাখা হয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে। এরপর মেজর সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামিদে মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।