সিনোফার্মের টিকায় শুরু গণটিকাদানের দ্বিতীয় পর্যায়
চীনের তৈরি সিনোফার্মের কোভিড টিকা দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে ঢাকার চারটি সরকারি হাসপাতাল ও দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে কেন্দ্রে এ টিকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ শনিবার সকাল থেকে রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনোফার্মার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চীনা নাগরিক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও অভিবাসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্রে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ কর্মসূচি শুরু করেছে। হাতে থাকা টিকা দেওয়া শেষ হলে দেশের তিন শতাংশ মানুষ আপাতত টিকার আওতায় আসবেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম শনিবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চীন সরকারের উপহার দেওয়া ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকেই সারা দেশে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এরই মধ্যে টিকা পৌঁছানো হয়েছে। টিকাকেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।’
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, এর মধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা সিনোফার্মের টিকা পাবেন। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এ টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দেশে টিকাদান কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায়। কর্মসূচির পরিচালক সামছুল হক বলেন, খুব শিগগির ফাইজারের টিকাও দেওয়া শুরু হবে। তবে তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সিনোফার্মের টিকা যাঁরা পাচ্ছেন
১. টিকার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে এরই মধ্যে যারা টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি, তাঁদের এই টিকা দেওয়া হবে।
২. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী।
৩. পুলিশ সদস্যেরা, যাঁরা আগে টিকা নেননি।
৪. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী, যাঁদের বিএমইটি নিবন্ধন কিংবা কার্ড আছে।
৫. সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটি’র শিক্ষার্থীরা।
৬. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা।
৭. বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পে (পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৮. ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
৯. সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড/পৌরসভার কর্মীরা।
১০. বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরাও পাবেন সিনোফার্মের এই টিকা।
সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে সিনোফর্ম টিকা নেওয়া যাবে।
এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে জড়িত ব্যক্তিরা সিনোফার্মের এই টিকা পাবেন।
বেলজিয়ামে তৈরি ফাইজারের এক লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। কোভ্যাক্স বাংলাদেশকে এক কোটি ডোজ টিকা দেবে। শিগগিরই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ৮০০ ডোজ টিকা দেশে আসবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে ৭০ লাখ। একই টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে ৩৩ লাখ। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ মানুষকে দেওয়া সম্ভব। তবে বাস্তবে পূর্ণ দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন ৪৩ লাখ মানুষ।
অন্যদিকে, চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে ১১ লাখ। এই টিকা দুই ডোজ করে সাড়ে ৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। পাশাপাশি করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশ ফাইজারের টিকা পেয়েছে এক লাখ। এই টিকার দুই ডোজ করে ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দুই ডোজ করে ছয় লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে।
সব মিলিয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকার দুই ডোজ করে পাচ্ছেন মোট ৪৯ লাখ মানুষ। তাঁরা দেশের জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ।