সুপারভাইজারকে মারধর : ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ
বাসের সুপারভাইজারকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) আবাসিক হলে ধরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা।
আজ বুধবার ভোর থেকে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে পরিবহণ শ্রমিকরা। দুপুরের পর অবরোধ তুলে নিলেও পাবনা থেকে ঢাকাগামীসহ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে এমএম ট্রাভেলসের একটি বাস পাবনার উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসটি মাঝপথে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। বিরতির নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট অতিবাহিত হলে পাবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। পথে একাধিবার বাসের চালক-হেলপার ও সুপারভাইজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান ওই শিক্ষার্থী। পরে মোবাইল ফোনে বন্ধুদের বাসটির হেলপার ও সুপারভাইজারকে ধরে নিতে বলেন। পরে ভোরে বাসটি পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পৌঁছালে আগে থেকেই অবস্থান করা কিছু শিক্ষার্থী বাসের সুপারভাইজারকে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নির্যাতন করা হয় এবং তার কাছে থাকা টাকাও কেড়ে নেওয়া হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার খবর পাবনার পরিবহণ শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকাল ৭টা থেকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নির্যাতিত সুপারভাইজার আব্দুল বারেক আসলাম বলেন, ‘হোটেলে ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় আমাকে গালাগাল করেন ওই শিক্ষার্থী। এ সময় আমি তাকে বুঝিয়ে বলি, বাসটি যেন ভোরে নিরাপদ সময়ে পাবনায় পৌঁছায়, এ জন্য আমরা একটু সময় ধীরে ধীরে যাই। পথে বাসের লাইট জ্বালানোর জন্যও তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। তখনও আমি তাকে বলি- এই সময়ে মহাসড়কে ডাকাতির সম্ভাবনা থাকে, তাই লাইট জ্বালানো থাকে।
আসলাম আরও বলেন, ওই ছাত্র মোবাইল ফোনে তার বন্ধুদের ফোন করে বাসটির হেলপার ও সুপারভাইজারকে ধরে নিয়ে যেতে বলেন। পরে ভোরে সব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে ৮-১০ শিক্ষার্থী আমাকে হলে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বেঁধে রেখে হকিস্টিক দিয়ে মারে। হাতেপায়ে খুর দিয়েও আঘাত করে। কয়েকজন শিক্ষার্থী হাত-পায়ের রগ কেটে পুকুরে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেয়। আমার কাছে থাকা বাসের ৪১ হাজার টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেয় তারা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন সেকশন অফিসার আসমা হক। তিনি বলেন, ‘আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাবনা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ। একজন শিক্ষার্থী একজন সুপারভাইজারকে তুচ্ছ ঘটনায় এভাবে নির্যাতন করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। সন্ধ্যায় আমাদের পরিবহণ শ্রমিক-মালিকদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আমাদের জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও উপস্থিত থাকবেন। যদি সেখানে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হয়, তাহলে আগামীকাল থেকে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জুয়েল জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে বিশৃঙ্খল কোনো কর্মকাণ্ড না করার জন্য শ্রমিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। মারধরের ঘটনার বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।