সুশীল সমাজের বক্তব্য বন্ধ করার ইচ্ছা সরকারের নেই : আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যুক্তিসঙ্গত সব সাজেশন সরকার শুনতে চায়। সুশীল সমাজের বক্তব্য বন্ধ করার ইচ্ছা সরকারের নেই।
আজ সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএসএইডের প্রামোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস প্রকল্পের আওতায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) আয়োজিত “শেপিং অব থার্ড সেক্টরল’স অ্যান্ড পলিসিস”বিষয়ক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আবার বসা হবে, সেখানে যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। কেন এই আইন করতে আমরা বাধ্য হয়েছি, তার প্রেক্ষাপট সবাই জানেন। এটা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। অনেকেই বলেছেন, এই আইন করে কোনো উপকার হয়নি, আমার মনে হয় কিছুকিছু উপকার হয়েছে। আমি এমন কথা বলব না, আইনটির কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। সব আইনেরই কিছুকিছু পদ্ধতিগত সমস্যা থাকে। আবার কিছুকিছু বাস্তবায়নের সমস্যা থাকে। যখন বাস্তবায়নে সমস্যা হয়, তখন আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়। ঠিক সেকারণেই বলছি, এই আইন নিয়ে আমরা আবারও বসব। যদি বিধি পরিবর্তন করে সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা সেদিকে যাব। যদি তার পরেও আমরা দেখি যে, আইনটির সংশোধন করা প্রয়োজন আছে, সেটা করতেও আমরা পিছুপা হবো না। কিন্তু সম্পূর্ণ আইনটিকে বাতিল করে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই বৈঠক রমজানের আগেই হতে পারে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কারও বাক-স্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ করার জন্য এটা তৈরি করা হয়নি। পেনাল কোডে ফিজিক্যালি চুরি করলে কী শাস্তি হয়, সেটা আছে। প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে চুরি আর শুধু ফিজিক্যালি হয় না। ডিজিটাল মাধ্যমেও হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে যে অপরাধগুলো হচ্ছিল, তা প্রতিরোধের জন্য একটি আইনের প্রয়োজন ছিল। বিশ্বের যেখানেই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছে, সেখানে কেউ বলেনি, এ আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই।;
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে এলে অংশীজনদের সঙ্গে একটি বৈঠক করা হয়েছিল। এরপর সংসদে স্থায়ী কমিটির সভায় এটকো ও সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে অংশীজনদের কিছুকিছু সাজেশন বা পরামর্শগ্রহণ করা হয়েছিল। দুঃখের হলেও সত্য এই আইন করার পর আমরা অনেক মিসইউজ ও অ্যাবিউজ দেখেছি। যখন এই আইনের যথেষ্ঠ অপব্যবহার হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসেছিলাম এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসেছিলাম। এই বৈঠকে আমরা প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। এরপর আমি জেনেভায় গিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পৃথিবীতে এরকম কোনো আইন আছে কিনা। যদি থেকে থাকে, তাহলে তার বেস্ট প্রাকটিসগুলো কী কী? সেটা জানা এবং সেটাকে এই আইনের সঙ্গে যুক্ত করে দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওই বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার অফিস, আইন, পররাষ্ট্র ও রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি ডিভিশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে এ বিষয়ে একটি সাজেশন পাওয়া গেছে এবং সেটা সরকার দেখছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া আছে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাতে সঠিক ও সাবলিলভাবে চলতে পারে, সেজন্য বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-২০১৬-এর বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ণের বিষয়ে তিনি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সঙ্গে কথা বলবেন। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ইউএসএইডের মেধাবি গিরি, অ্যাক্টিং অফিস ডিরেক্টর বলেন, ‘আজকের এই আয়োজনের প্যানেলিস্টরা যে প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করেছেন, ইউএসএইড তার প্রতি সমর্থন জানায়। আশাকরি, প্রস্তাবনাগুলো গৃহীত হলে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছা সেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-২০১৬-এর প্রয়োগকে আরও কার্যকরি ও জনহিতকর করে তুলবে। আশা করি, আমরা শীঘ্রই আজকের আলোচনার প্রেক্ষিতে আইন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতের কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পারব।’
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অধ্যাপক সি আর আবরার ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।