‘সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে’
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান জাতীয় সংসদে বলেছেন, বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে ‘বেগমপাড়া’, ‘সেকেন্ড হোম’, ‘থার্ড হোম’তৈরি করেছেন। এই ‘সেকেন্ড হোম’নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে।
আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মোকাব্বির খান এসব কথা বলেন।
গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার বিলাসবহুল জীবনযাপন ও বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, হয়তো কথাগুলো না জেনেই বলেছেন অথবা অতীতের জানা থেকে বলেছেন। আমি যখন ইংল্যান্ডে ব্যবসা করতাম, তখন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানে বিলাসবহুল জীবন যাপন করেছি, বিলাসবহুল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি ব্যবহার করেছি। এটা সত্য।’
মোকাব্বির খান বলেন, ‘সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাদে অনেকে হয়তো শত শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু আমি সংসদের সদস্য হওয়ার পর জীবনের সব বিলাসিতা ছেড়ে নিজেকে জনগণের মাঝে উৎসর্গ করেছি।’
গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি সরকারি কোনো ফ্ল্যাট বা প্লটের জন্য আবেদন করিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া ন্যাম ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকি। উত্তরায় একটি বাড়ি কিনেছিলাম। সংসদ সদস্য হওয়ার পর অর্থাভাবে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। বিলাসবহুল গাড়ি তো দূরের কথা, হয়তো আমি একমাত্র সংসদ সদস্য, যাঁর কোনো গাড়িই নেই।’
মোকাব্বির বলেন, ‘রাজনীতি আজ লুটেরাদের হাতে এবং অর্থনীতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে চাটুকারেরা ফায়দা লুটছে এবং লোটার চেষ্টা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নীতি-নৈতিকতা আর আদর্শের সেই আওয়ামী লীগ নেই।’
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে মোকাব্বির খান সরকারের বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন।’এ সময় মোকাব্বির খানের লন্ডনে বাড়ি, অর্থ সম্পদের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ বক্তব্য দিতে গিয়ে গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, আপনি সঠিক তথ্য নিয়ে কথাগুলো বলেননি।’
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মহাজোটের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন উল্লেখ করে মোকাব্বির দাবি করেন, ‘শক্তিশালী বলেন, আর দুর্বল যা-ই বলেন না কেন, বর্তমানে এই সংসদে আমিই একমাত্র সত্যিকার বিরোধী দলের সদস্য।’
মোকাব্বির বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে তাঁর একটি বাড়ি আছে, সেটা গোপনীয় কিছু নয়। এটা নিয়ে বিব্রত হওয়ারও কিছু নেই। আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা তাঁর বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন।’
মোকাব্বির খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইংল্যান্ডে আমার একটি সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন। এই পার্লামেন্টের বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশের অর্থ লুটপাট করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন। এই সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। তখন প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন, তাই সেদিকে যাব না।’
মোকাব্বির বলেন, ‘রাজনীতি আজ লুটেরাদের হাতে এবং অর্থনীতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে চাটুকারেরা ফায়দা লুটছে এবং লোটার চেষ্টা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নীতি-নৈতিকতা আর আদর্শের সেই আওয়ামী লীগ নেই। এই পরিস্থিতি আগাম বুঝতে পেরেই ১৯৯৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে জন্ম নেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।’
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে মোকাব্বির বলেন, ‘বাজারে গেলে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। যে যেভাবে খুশি সেভাবে লুটপাট করছে, তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। সরকার এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছে। এখানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই কার্ডগুলোর ৮০ ভাগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে একটি ট্রাইব্যুনাল করে কয়েকজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, লুটেরাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার আহ্বান জানান।