সোম-মঙ্গলবার বিক্ষোভের কর্মসূচি বিএনপির
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা, গুলি চালিয়ে হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে টানা দুই দিনের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
এর মধ্যে স্বাধীনতা দিবসে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি আগামী সোমবার ঢাকাসহ সব মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে।
পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার একই দাবিতে বিএনপি সারা দেশের সব জেলা সদরে বিক্ষোভ ও মিছিল করবে।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের আক্রমণের’ প্রতিবাদে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আগামীকাল রোববার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করবে। এর ফলে টানা তিনদিন বিক্ষোভ করবে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সফর এসেছেন। মোদির এই সফরের বিরোধিতা করে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বিক্ষোভ করে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভের সময় পাঁচজন নিহত হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বায়তুল মোকাররম ও যাত্রাবাড়ী এলাকায়। এতে অনেকেই আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচজন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম আজ শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। এ ছাড়া আগামীকাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
হেফাজতের হরতালকে ‘যৌক্তিক’ মনে করলেও বিএনপি সরাসরি তাতে সমর্থন দেয়নি। আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যেটা প্রতিবাদ করছি, বিক্ষোভ মিছিল করছি, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের দিনে মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদে। খুব স্পেসিফিক বলছি যে, প্রত্যেকটা সংগঠনের, প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার আছে প্রতিবাদ করার বা তাঁর মত প্রকাশ করবার। সেই মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যখন গুলি করা হয়েছে আমরা সেইটার প্রতিবাদ করছি, আমরা এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের একটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেকটি নাগরিকের ন্যায়সঙ্গত সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে ভিন্নমত পোষণ করবার। সেখানে তারা যদি কোনো কর্মসূচি দেয় বা হরতাল আহ্বান করে সেটা যৌক্তিক তো বটেই। তবে একই সঙ্গে সরকার যদি তাকে প্রতিহত করবার বা বন্ধ করার অগণতান্ত্রিক অথবা হঠকারী হুমকি দেয়- সেটা হবে একেবারেই হঠকারী ব্যবস্থা। সরকারের কাছে থেকে এই ধরনের ব্যবস্থা কেউ আশা করতে পারে না। যদি এখানে কোনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবসে ৫০ বৎসর পূরণের এই দিনে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড জাতির জীবনে এক জঘণ্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ গতকালই (শুক্রবার) জানিয়েছি।’
‘মিছিল, সমাবেশ সভা অনুষ্ঠান করা আমাদের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার। এই জঘণ্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখবার জন্য হত্যা, খুন, গুম নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দল এবং ভিন্নমতকে দমন করে চলেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে তাদের মুক্তি দাবি করেন।
এর আগে, বিকেল ৩টায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠক উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।