স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেই বাবা-ছেলের চিরবিদায়
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। সে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নতুন শার্ট পড়েছিল শিশু আব্দুল্লাহ আল আলিফ। বাবা সাজু মিয়া তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার পাশে। কিছু বুঝে উঠার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিআরটিসির একটি বাস মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাবা ছেলেকে চাপা দেয়। ফলে স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর আগেই দুনিয়া থেকেই চিরবিদায় নেয় আলিফ ও তার বাবা।
আজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল্লাহ আল আলিফ (৭) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কুমরপুর হযরত শাহ আলী কুলি বেগ (রহ.) কেজি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহা. আবু তাহির জানান, আলিফের বাবা মো. সাজু মিয়া দীপশিখা নামের একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি পার্শ্ববর্তী তানোর উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গোদাগাড়ীতে এলে আলিফকে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করেন। আর বাসা নেন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের দেওপাড়া ইউনিয়নের বিজয়নগর কুমরপুর এলাকায়। করোনার কারণে গত বছর স্কুলে পরীক্ষা হয়নি। এ বছর সে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। অত্যন্ত হাসিখুশি মায়াবি চেহারার আলিফকে স্কুলের শিক্ষকরা খুবই আদর করতেন।
প্রধান শিক্ষক আবু তাহির আরও জানান, স্কুলটি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যেহেতু এ স্কুলে শেষ পরীক্ষা, তাই আজ সকালে স্কুলে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্কুল থেকে আধা কিলোমিটার দূরের ভাড়া বাসা থেকে বাবার সঙ্গে আসছিল আলিফ। প্রতিদিন আলিফকে তার বাবা মোটরসাইকেলে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যেতেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বাসায় দেড় বছরের ছেলেকে রেখে মা জীবন নাহার আলিফকে বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরের রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসেছিলেন। সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সাজু মিয়া। ছেলেকে বাবার কাছে রেখে মা বাসার দিকে পা বাড়ান। তখনও বাসায় পৌঁছেননি। সাজু মিয়া মোটরসাইকেল চালুও করেননি। সময় সকাল সোয়া ৯টা হবে। এমন সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী একটি বিআরটিসি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিয়ে গাছের সঙ্গে আটকে যায়। এতে বাবা ও ছেলে দুজনেই ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ খবর মুহূর্তে পৌঁছে যায় স্কুলে। স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। আলিফের বাবা সাজু মিয়া বিনয়ী ও ভদ্র মানুষ ছিলেন।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। দুপুরে দীপশিখা এনজিওর কর্মকর্তারা মৃতদেহ দুটি বুঝিয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।’