স্ত্রীর প্রেমিকের হারিয়ে যাওয়া ফোনে শিক্ষক হত্যার রহস্য উদঘাটন
গত বছরের ২৩ মে ঈদুল ফিতরের আগের রাতে মৃত্যুবরণ করেন বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন। নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতুর দেওয়া তথ্য মতে সবাই জানতে পারেন, রাতে ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন নাসির।
তবে নাসিরের স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়ার হারিয়ে যাওয়া ফোনের মাধ্যমে জানা গেছে, নাসিরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। পরিকল্পিতভাবে নাসিরকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কম্বল চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন স্ত্রী ও তার প্রেমিক। তারা দুজনই আজ বরগুনার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জানা যায়, নিহত নাসির ঢলুয়া ইউনিয়নের গয়েজ উদ্দিনের ছেলে। নাসিরের স্ত্রী মিতুর প্রেমিক রাজু তাঁর মোবাইল ফোনটি বরগুনার একটি দোকানে চার্জে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাজুর মোবাইলটি চুরি হয়। হারিয়ে যাওয়া সেই মোবাইলে নাসির হত্যার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী বিষয়ের রাজু ও মিতুর কথোপকথনের রেকর্ড জমা থাকে। সেই রেকর্ড নাসিরের স্বজনদের হাতে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনা সদর থানায় অভিযোগ করেন নাসিরের বড় ভাই মো. জলিল হাওলাদার।
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আজ ভোররাতে অভিযান চালিয়ে নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) ও তার প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ফাতেমা মিতু বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মো. মাহাতাব হোসেনের মেয়ে ও রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, গত বছরের ২৩ মে ঈদুল ফিতরের আগের রাতে নাসিরের মৃত্যুর খবর পান স্বজনেরা। পরবর্তী সময়ে ঘটনার আট মাস ১৯ দিন পর তার স্বজনেরা জানতে পারেন, নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজু নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কম্বল চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
এ বিষয়ে নাসিরের বড় ভাই ও মো. জলিল হাওলাদার বলেন, ‘মিতুর কাছ থেকে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই আমরা। তখন আমাদের সন্দেহ হয়নি। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নাসিরকে দাফন করি। এ ঘটনার আট মাসেরও বেশি সময় পর মিতু ও রাজুর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের বেশ কয়েকটি রেকর্ড পাই আমরা। সেসব রেকর্ডে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথোপকথন রয়েছে। আমরা তখন নাসিরের হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হই।’
নাসির ও মিতু দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।