স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর ‘সুসম্পর্ক’, বিদেশি সিরিয়াল দেখে খুনের পর লাশ গুম
স্ত্রীর সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্কের’ জেরে জয়নাল (২০) নামের এক তরুণকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মো. সাব্বির হোসেনসহ (২২) তার তিন বন্ধু। হত্যার পর লাশ গুম করতে বিদেশি সিরিয়াল দেখেন তারা। পরে তারা পানির ড্রামের মধ্যে লাশ লুকিয়ে ফেলে। গত ১৪ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল মুত্তাকিম।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব দাবি করে, গত শনিবার ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের গোসলখানার পানির ড্রাম থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ পঁচে কঙ্কাল যাওয়ায় তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না।
আব্দুল মুত্তাকিম বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের পর র্যাব-১ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত এবং হত্যাকারীদের খুঁজতে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর র্যাব সোর্স নিয়োগ করে ভুক্তভোগী ও আসামিদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে।’
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে র্যাব নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাব্বির হোসেন, আনোয়ার হোসেন (২০) ও সুরুজ আলীকে (১৮) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তারা এ হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দায় স্বীকার করে নেন।
র্যাবের দাবি, আসামি সাব্বির হোসেন ও তার স্ত্রী সাথী (১৭) আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে জামতলা এলাকায় থাকতেন। ভুক্তভোগী জয়নাল ও সাব্বির পরস্পর একই গ্রামের বন্ধু। পরে গত মে মাস থেকে সাব্বিরের বাসায় সাবলেটে থাকা শুরু করেন জয়নাল। এ সময় সাথীর সঙ্গে জয়নালের ‘সুসম্পর্ক’ তৈরি হয়। যা সাব্বির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হিসেবে সন্দেহ করেন।
আব্দুল মুত্তাকিম আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে সাথী ও সাব্বিরের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এর জেরে গত জুনে সাব্বির তার সাথীকে শ্বশুর বাড়ি লালমনিরহাটে পাঠিয়ে দেন। এরপর সাব্বির জয়নালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। জয়নালকে হত্যার জন্য সাব্বির পরিকল্পিতভাবে তার গ্রামের বন্ধু আনোয়ার ও সুরুজকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরে তারা গত ১৪ আগস্ট রাতে জয়নালকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যা করার পর লাশ গুম করার জন্য একটি পানির ড্রামের মধ্যে জয়নালের লাশ রেখে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আব্দুল মুত্তাকিম বলেন, ‘হত্যাকারীরা টিভি ও মুঠোফোনের মাধ্যমে অপরাধ সংক্রান্ত বিদেশি সিরিয়াল দেখা শুরু করেন। সেখান থেকে ধারণা নিয়ে তারা লাশ গুম করে পানির ড্রামের মধ্যে রেখে মুঠোফোন বন্ধ রাখেন। তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’