স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে গেলে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দশম দিনের আজকের অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর’ উদ্বোধন করবেন। সেখানে মোদি তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় যোগ দেবেন।
নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে আজ সকালে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১০ দিনের অনুষ্ঠানমালায় যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি হচ্ছেন পঞ্চম রাষ্ট্রীয় অতিথি।
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর নরেন্দ্র মোদির এটাই প্রথম বিদেশ সফর। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় দুই প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী একে অপরকে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতার পর নরেন্দ্র মোদি পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান। সেখানে স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। এরপর তিনি স্মৃতিসৌধে রক্ষিত শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এরপর স্মৃতিসৌধের আঙিনায় একটি অর্জুন গাছের চারা রোপণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ১৯৯৯ সালে সফরে এসে ওই একই প্রাঙ্গণে একটি গন্ধরাজ ফুলের চারা রোপণ করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি। এক টুইটে দুটি গাছের ছবি টুইট করে এ তথ্য জানান নরেন্দ্র মোদি।
এরপর, নরেন্দ্র মোদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান।
দুপুরে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে একই স্থানে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি, বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন বলে আজ জাতীয় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল শনিবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ পরিদর্শন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ওড়াকান্দি মন্দির এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী দেবী মন্দির পরিদর্শন করবেন।
একই দিন বিকেলে, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন। একই সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি যৌথভাবে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
পরে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন নরেন্দ্র মোদি।