স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের বিশাল অংশই লুটপাট হচ্ছে : জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, দলীয় বিবেচনা না করে করোনাকালে প্রকৃত দরিদ্রদের পরিবার প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিতে হবে। তাহলেই বিপর্যস্ত মানুষ ঘর থেকে বের হবে না, লকডাউন কার্যকর হবে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ১০ হাজার মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জি এম কাদের এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, জিডিপির শতকরা একভাগ বিতরণ করলেই করোনাকালে কর্মহীন মানুষ পরিবারসহ ভালো থাকবে। আমরা বারবার বলেছি, লকডাউন দেওয়ার আগে অবশ্যই হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য, ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুধায় যার ঘরে দুধের শিশু কাঁদবে, সে কখনোই লকডাউন মানবে না। হতদরিদ্র মানুষের জন্য পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির অর্থায়নে এবং জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ব্যবস্থাপনায় খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জি এম কাদের বলেন, সরকার শুধু আশ্বাস দিয়ে বলে করোনার টিকা আসছে। কিন্তু, কখন আসবে, কিভাবে আসবে বা কোথা থেকে আসবে তা বলতে পারছে না। তাই করোনার টিকা নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সারা বিশ্ব যখন ভ্যাকসিন দিয়ে করোনা মোকাবিলা করছে, তখন আমাদের দেশ লকডাউন দিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে চাচ্ছে। এটা কখনোই যুক্তিযুক্ত নয়। করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। এ কারণেই দিনে দিনে করোনায় মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। অথচ, আমরা এক বছর আগেই বলেছি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। লকডাউন নয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সরকারের অবহেলায় করোনার এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সারা বিশ্ব যখন জিডিপির পাঁচ থেকে ছয় ভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থায় খরচ করে, তখন আমরা মাত্র এক ভাগ খরচ করছি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের বিশাল অংশই লুটপাট হচ্ছে। তাই আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে না।
বিরোধী দলীয় উপনেতা আরও বলেন, দেশের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। জেলা, উপজেলা থেকে করোনা রোগী বিভাগীয় শহর ও রাজধানীতে ভিড় করছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে সিট না থাকায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে লাখ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর যাদের টাকা নেই, তারা টাকার অভাবে মা-বাবাসহ প্রিয়জনদের বিসর্জন দিচ্ছেন। এমন করুণ পরিণতির দেশ আমরা কখনোই চাইনি। দেশের মানুষ এখন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা স্মরণ করছেন। ৮৮-এর বন্যায় পানি ভেঙে মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়ে পল্লীবন্ধু যে নজির স্থাপন করেছেন তা বাংলাদেশে ইতিহাস হয়ে আছে। সরকারের উচিত প্রতিটি দুর্যোগেই পল্লীবন্ধুকে অনুসরণ করা।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পল্লীবন্ধুর শাসনামল মানুষ মনে রেখেছে, তাই সাধারণ মানুষ আবারও জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
গত ১ জুলাই থেকে প্রতিদিন বিকেলে কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।