স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সংসদে উত্তাপ, হইচই
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অব্যাপস্থাপনা ও স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আজ বুধবার সংসদে খানিকটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে আরও ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসবে এবং এ বছরের মধ্যেই পাঁচ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া যাবে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সকালে সংসদে বাজেট অধিবেশনের দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীরা স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহে মঞ্জুরী দাবিগুলো উত্থাপন করেন। এসব দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্যরা। পরে সব দাবিই কণ্ঠভোটে পাশ হয়।
এ সময় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবে, স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করেন।
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে টিকাদানের হার মাত্র দুই শতাংশ। আর বিশ্ব এরই মধ্যে ২০ থেকে ২২ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছে।’
একই দলের সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করে বলেন, ‘জনবলের ঘাটতির কারণে আজকে কোটি কোটি টাকা যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। ১৩ বছর আজকে সরকার ক্ষমতায়, তৃতীয় টার্মের সরকার। আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান তাঁর সংসদীয় এলাকার স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল অবস্থা তুলে ধরে হাসপাতালের জন্য অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, এক্স–রে মেশিন চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
এসবের জন্য বেশ কয়েকবার ডিও লেটার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমি বলি, তিনি বলেন, ডিও লেটার দেওয়ার জন্য। আমি ডিও লেটার নিয়ে উনার কাছে যাই। আমি দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ডিজিও বদলি হয়ে যান। এ কারণে আমি এলাকার জন্য চিকিৎসক পাই না।’
এ সময় কোনো কোনো সংসদ সদস্য মাস্ক কেনায় দুর্নীতি ও বরাদ্দ খরচ করতে না পারার অভিযোগও করেন।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিল। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্য সেবা আমরা দেখব। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি।’
এসব বিষয়ে জবাব দিতে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আপনারা হাসপাতালের চেয়ার। আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে অনিয়মের কথা বললে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুনির্দিষ্ট বলতে হবে কোথায় দুর্নীতি হয়েছে? মাস্ক নিয়ে কথা বলছেন। মাস্ক তো কোনোদিন কেনাই হয়নি। রিসিভ করা হয়নি। তার পেমেন্ট দেয়া হয়নি। ঢালাও অভিযোগ দিলে তো চলবে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে হইচই হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের একযোগে বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদরা। কিছুটা উত্তাপ ছাড়ায় সংসদে।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য একটু থেমে গেলে সামনে বসা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী তাঁকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে ইশারা করেন।
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করতে ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে সরকার।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টিকার ব্যবস্থা আছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটা দিয়ে আমরা পাঁচ কোটি লোককে টিকা দিতে পারব। জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি টিকা দিয়ে আমরা সাত কোটি লোককে টিকা দিতে পারব। এটা আগামী বছরের প্রথম চার মসের মধ্যে পাব। প্রায় ৮০ ভাগ লোককে আমরা আগামী বছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে টিকাদান করতে পারব।’
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভাল। ভারতের মতো এখানে অক্সিজেনের সংকট হয়নি।
অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে রীতি অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ অর্থবছরের ‘নির্দিষ্টকরণ বিল’ সংসদে উপস্থাপন করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর মধ্য দিয়ে পাশ হয় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এই বাজেট আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।