সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন মানার সংস্কৃতি গড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার ও ট্রাফিক আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক-২০২২’ উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত সব সেতু পুনর্নির্মাণ করে চলাচলের উপযোগী করেন। পাশাপাশি তিনি প্রায় ৪৯০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণসহ বেশ কিছু নতুন সেতু নির্মাণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে জাপান সফরের সময় জাপান সরকারের নিকট যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পাঁচ বছরে ১৫ হাজার ১২৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করি এবং মোট ৩৭ হাজার ১৭১ কিলোমিটার রাস্তা হেরিংবোন বন্ডে রূপান্তরিত করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ছয় হাজার ৫২৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ১০ হাজার ৮৬৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ করি। প্রায় ১৯ হাজার বৃহৎ, মাঝারি, ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করি। পাকশী, ধরলা, দোয়ারিকা, গাবখান, রূপসা, সুরমা (দ্বিতীয়) ও মেঘনা সেতুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করি। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই ও এর স্থান নির্ধারণ করি। সড়ক পথে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ট্রায়াঙ্গল প্রকল্প গ্রহণ করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সড়ক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের সব জাতীয় মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীতকরণ, মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, ওভারপাস-আন্ডারপাস নির্মাণসহ নতুন নতুন সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ অথবা পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করেছে। গত প্রায় ১৪ বছরে চার হাজার ৪০৪টি সেতু, ১৫ হাজার ৮৪টি কালভার্ট ও ২২ হাজার ৪৩৩ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করেছি।’
সকারপ্রধান বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে বাঙালির আত্মমর্যাদা, গৌরব ও সক্ষমতার প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে গত ২৫ জুন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক সুড়ঙ্গপথ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। উন্নত বিশ্বের আদলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত উত্তরা হতে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে, যার একাংশ আগামী ডিসেম্বর মাসে চালু হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। সড়ককে নিরাপদ করতে ডিভাইডার স্থাপন, বাঁক সরলীকরণ, মহাসড়কে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ ও গতি নিয়ন্ত্রক বসানোসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনয়ন, দক্ষ চালক তৈরি এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর এবং টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করাই সরকারের লক্ষ্য।’