হংকং থেকে অবৈধভাবে তরঙ্গ কিনে চলত হেলেনার জয়যাত্রা টিভি
সরকারের অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে চলত জয়যাত্রা টেলিভিশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হেলেনা জাহাঙ্গীর তাঁর এই আইপি টেলিভিশনের সম্প্রচারের জন্য হংকংয়ের স্যাটেলাইট চ্যানেল ব্যবহার করতেন। হেলেনার সহযোগী হাজেরা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য জানতে পেরেছে র্যাব।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে র্যাব অভিযান চালিয়ে রাজধানীর গাবতলী থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী ও জয়যাত্রা টিভির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হাজেরা খাতুন (৪০) ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে (৪৭) গ্রেপ্তার করে।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি দাবি করেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর তাঁর জয়যাত্রা আইপি টেলিভিশন ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি স্যাটালাইটের মাধ্যমে তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৪টি দেশে স্বাভাবিকভাবে সম্প্রচার করে আসছিল।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাজেরা খাতুনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বাংলাদেশের যেসব টিভি চ্যানেল রয়েছে, সেগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করে আসছে। আর জয়যাত্রা টিভি হংকংয়ের স্যাটেলাইট স্টেশনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে তরঙ্গ নিয়ে চালাত। এবং এই স্যাটেলাইটের রিসিভার দেশের ৫০টি জেলার কেবল অপারেটরদের জয়যাত্রা টিভি সরবরাহ করেছিল। পুরো প্রক্রিয়াটা অবৈধ।’
‘এই রিসিভার যেসব জেলা প্রতিনিধিরা কেবল অপারেটরদের দিতে ব্যর্থ হয়েছে, ওই প্রতিনিধিদের সঙ্গে জয়যাত্রার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাজেরা খাতুন আরও জানিয়েছেন, ৫০টি জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিদের নিয়োগ দিয়েছে জয়যাত্রা টেলিভিশন। জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এককালীন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ করে টাকা নেওয়া হতো। এ ছাড়া উপজেলা থেকে এককালীন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিত’, যোগ করেন খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোনও বৈধ অনুমোদন নেই বলে গ্রেপ্তারকৃত হাজেরা খাতুন জানান। জয়যাত্রা বিশ্বের যে ৩৪টি দেশে সম্প্রচারিত হয়ে আসছিল, দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধিরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যারা প্রতি মাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে থাকেন হেলেনা জাহাঙ্গীরকে।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি গার্মেন্টসে অ্যাডমিন (এইচআর) পদে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকট আত্মীয় এবং একইসঙ্গে কর্মদক্ষতা শুনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। ফলশ্রুতিতে ২০১৬ সালে তিনি জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি জয়যাত্রা টিভির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (অ্যাডমিন) পদে নিযুক্ত হন। হাজেরা খাতুন মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনা জাহাঙ্গীরের আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন।’