হঠাৎ দেবে গেল মন্দিরসহ ১০ বাড়ি, ঝুঁকিতে থানা, স্কুল ভবন ও বাজার
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরের কুমার নদের পাড়ে থাকা একটি মন্দিরসহ ১০টি বাড়ি হঠাৎ ১০ থেকে ২০ ফুট দেবে গেছে। ভেঙে পড়েছে পাকা স্থাপনাও। পাড়জুড়ে দেখা গেছে ফাটল। ঝুঁকিতে রয়েছে নগরকান্দা সরকারি এম এন একাডেমির ভবন, থানা ভবন, বাজারের কেন্দ্রীয় কালী মন্দির ভবনসহ পৌর বাজার।
গত সোমবার দিবাগত রাতে কুমার নদপাড়ের বাড়িগুলো দেবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো নিম্ন আয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। আতঙ্কে নদপাড়ের বাড়ি থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়েরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরকান্দা পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাংজগদিয়া গ্রামের গাছ, ঘরসহ সব ভেঙে পড়ে আছে। আরও ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার মানুষ।
স্থানীয়েরা জানান, কিছুদিন আগেই সরকারিভাবে কুমার নদ খনন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে কাজটি বাস্তবায়ন করেছে বেঙ্গল গ্রুপ। স্থানীয়দের অভিযোগ—খননের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু লোক এবং স্থানীয় কিছু লোক মিলে অপরিকল্পিতভাবে নদের এক পাশে কেটে গেছে। আর যে জায়গায় ভেঙেছে, সে এক জায়গাতেই অনেক গভীর করেছে। নদী থেকে উত্তোলিত বালু বিক্রির জন্যই এসব করেছে চক্রটি—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। যার ফলেই ভেঙে পড়ছে নদপাড়ের বাড়িগুলো।
কয়েকদিন আগে একইভাবে উপজেলার পাঁচকাইচাইল এলাকায় নদপাড়ে বসবাসরত আশরাফ মাতব্বর ও সেলিম ব্যাপারীর বসতবাড়ি একইভাবে ভেঙে পড়ে বলে জানান স্থানীয়েরা।
এ ছাড়া নগরকান্দা সরকারি এম এন একাডেমির নবনির্মিত ভবন, থানার নবনির্মিত ভবন, বাজারের কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের ভবন, একাধিক আবাসিক ভবনসহ পৌর বাজারের একাংশ ঝুঁকিতে রয়েছে। এলাকায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে, যা প্রায় ছয় থেকে সাত ফুট গভীর। নদের পাড়ে বসবাসরত ওই এলাকার বাসিন্দারা তীব্র ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত উজ্জ্বল মালো বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে একটু ফাটল দেখা গেয়েছিল। সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে হুড়মুড় শব্দ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি আমার পাশের ঘর ভেঙে নদে পড়ে গেছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘরের বাইরে আসি। এমন সময় আমার একতলা ভবনটিও চোখের সামনে ভেঙে পড়ে যায়।
উজ্জ্বল মালো আরও বলেন, ‘আমি বাজারে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই। থাকার এ বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো সহায়-সম্পদ নেই। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব, সে চিন্তাই করছি।’
ক্ষতিগ্রস্ত অলোকা ও মুক্তি নামের দুই গৃহবধূ বলেন, ‘ঘরের মালামাল নিয়ে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে আছি। আমরা কোথায় যাব এখন? আমাদের জন্য কিছু করুন। আশপাশের মানুষ এসে বলল ঘরের মালামাল বের করতে, সে মালামাল বের করতে করতে ঘর ভেঙে পড়ে গেল।’
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বলেন, ‘গতকাল সকালে ফাটল দেখা গেছে। এর পরে আস্তে আস্তে বড় হয় সে ফাটল। রাতেই একটি মন্দির এবং ১০টি বাড়ি ভেঙে পড়ে। ঝুঁকির মুখে আছে আমার ওয়ার্ডের অন্তত ১০০ বাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা বলেছে—দেখি কী করা যায়। কিন্তু, এখনও কোনো কাজ তারা শুরু করেনি।’
নগরকান্দা পৌর মেয়র নিমাই চন্দ্র জানান, ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু বিক্রি করার জন্যই আজ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, না হলে কুমার নদ কোনোদিনও ভাঙেনি। পৌরসভার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে থাকবেন জানিয়ে পৌর মেয়র বলেন, ‘যারা এখান থেকে বালু বিক্রি করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেতী প্রু বলেন, ‘নদের পাড়ে ফাটল হওয়ায় আমি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে জানিয়েছি। জেলা সমন্বয় সভায় এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে। নদীর পাড় রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরেজমিনে লোক পাঠিয়েছি। এটা সমাধানের চেষ্টা চলছে। বুধবার থেকে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।’