হতদরিদ্র চার পরিবারকে আয়কর জমাদানের নোটিশ!
দুইজন দিনমজুর। একজন থ্রি-হুইলার ও আরেকজন ভ্যানচালক। এই চারজনের স্ত্রীর নামে আয়কর পরিশোধের নোটিশ দিয়েছে বরিশাল উপ-করকমিশনার কার্যালয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, যাদের নামে আয়কর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা নিজেরাই সরকারি সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবনযাপন করছেন। ফলে এ ঘটনা একটি বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
যদিও কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, অন্য কেউ এই চারজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এজন্য তাদের নামে নোটিশ গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ না করা হলে তাদের জরিমানা গুনতে হবে। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপীন চন্দ্র বিশ্বাস আজ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, হতদরিদ্র ওই পরিবারগুলো আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদের কথা শুনেছি এবং কর কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিবার চারটি যেন আয়কর পরিশোধ থেকে মুক্ত হন তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার শরিফাবাদ গ্রামের ভ্যানচালক কবির ইসলাম বেপারীর স্ত্রী গৃহিনী কল্পনা বেগম এবং দিনমজুর মহসিন বেপারীর স্ত্রী সুবর্ণা মোহসিনের নামে ২৮ জুলাই নোটিশ আসে। ওই গ্রামের বাসিন্দা মাহেন্দ্রা চালক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগমের নামে ২২ আগস্ট এবং বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চাঁনমিয়া সরদারের স্ত্রী গৃহিনী মনোয়ারা বেগমের নামে ২৪ আগস্ট নোটিশ আসে। এদের মধ্যে কল্পনা বেগম, সেলিনা বেগম ও সুবর্ণা মোহসিন একই পরিবারের আপন তিন ভাইয়ের স্ত্রী। বরিশাল উপ-করকমিশনার কার্যালয়ের (বৈতনিক) শাখা থেকে উপ-করকমিশনার স্বাক্ষরিত নোটিশগুলো বিভিন্ন তারিখে ইস্যু করা হয়।
এর মধ্যে কল্পনা বেগম ও সুবর্ণা মহসিনকে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ সালের ১২৪ ধারায় কেন জরিমানা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৩০ ধারায় ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও মনোয়ারা বেগমকে কেন জরিমানা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য আজ ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। ওদিকে সেলিনা বেগমকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
সুবর্ণা মোহসিন বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। পরিবারে দুটি প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। শুধুমাত্র বসতভিটে ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি আমাদের নেই। এখন যে ট্যাক্সের নোটিশ এসেছে তা কোথা থেকে পরিশোধ করব।’
কল্পনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ভ্যানচালক। এমন কোনো সম্পদ তাদের নেই যে তার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য সরকারি চিঠি ইস্যু করতে হবে।’ একই কথা জানান বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চাঁন মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
সেলিনা বেগম জানান, তার স্বামী মাহেন্দ্রাচালক। অথচ তার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। এমনকি সেই (সেলিনা) আয়কর পরিশোধ না করায় তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, ‘নোটিশপ্রাপ্ত চারজনই অতিদরিদ্র। এদের মধ্যে সুবর্ণা মোহসিন এবং সেলিনা বেগমের স্বামীর নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির রেশন কার্ড রয়েছে। অপর দুজন গৃহিনীর স্বামী দিনমজুর। তাদেরও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। তাদের আয়কর পরিশোধ করার নোটিশ মনে হয় কোথাও অসঙ্গতি রয়েছে।’
কর অঞ্চলের বরিশালের উপ-করকমিশনার সদর দপ্তর (প্রশাসন) মো. আবুল কালাম আজাদ দুপুরে জানান, চারজনের আইডি ব্যবহার করে কেউ হয়তো আয়কর প্রদানের জন্য রেজিট্রেশন করেছেন। ফলে তাদের কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করলে নূন্যতম জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে তাদের।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের মধ্যের কেউ অফিসে এসে যোগাযোগ করলে কর অবমুক্তের ব্যবস্থা করা হবে।’