হলি আর্টিজান হামলার ৫ বছর : বিচারকাজের অগ্রগতি নেই
পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি হলি আর্টিজান বেকারির ভয়াবহ জঙ্গি হামলা মামলার বিচারকাজ। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এরপর আসামিরা আপিল করলেও ১৯ মাসে নেই কোনো অগ্রগতি।
এদিকে, ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর থেকে দেশে জঙ্গি দমন তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা হারিয়েছে বলে মনে করছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান।
পাঁচ বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় হামলায় চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনই বিদেশি নাগরিক। হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে পুলিশ ও র্যা বের যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালিত হয়। ওই সময় অন্তত ৩৫ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মামলার তদন্তভার পায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। হামলায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে পাঁচ জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয় আরও আট জন। বাকি আট জনকে আসামি করে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিটিটিসি ইউনিট। প্রায় দেড় বছর বিচারকাজ শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাত জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। খালাস পায় একজন।
রায়ের পর আসামিদের সবাই জেল আপিল করেন আর খালাস মিজানের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু সেখানেই থেমে রয়েছে মামলার কার্যক্রম। ১৯ মাস পেরিয়েও বৈচারিক কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি নেই। সবে মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পেপারবুক তৈরি হয়েছে, যা হাইকোর্টে উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত বেঞ্চ নির্ধারণ না হওয়ায় কোনো শুনানি করতে পারেননি আদালত।
সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলছেন, ‘সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’ আদালতের রায়ে অপরাধীদের সঠিক বিচারের আশাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, তাদের বড় ধরনের হামলার সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই।’
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘তাদের (জঙ্গি) প্রচার কৌশল বা প্রশিক্ষণ সবকিছুই অনলাইন নির্ভর। এবং সেই সাইবার স্পেসও আমরা মনিটরিং করছি। তাদের রেডিক্যালাইজড কনটেন্ট আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াসহ তাদের এনক্রিপটেড যে অ্যাপ আছে, সেখানে যাতে তাঁরা পোস্ট করতে না পারে, সে বিষয়েও আমরা বিটিআরসির সঙ্গে কাজ করছি। আমরা তাদের থেকে এগিয়েই আছি। তারা কোনো প্ল্যান করার আগেই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা থেকে নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংস্থাগুলোর তৎপরতার কারণে কোনো জঙ্গি সংগঠন নতুন করে সংগঠিত হতে পারেনি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা ছিল হোম গ্রোউন্ড জঙ্গি। বিদেশি কোনো লোক এসে এখানে তাদের দীক্ষা দেয়নি। এখানে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের উত্থান হয়েছিল। এখনও এই হোম গ্রোউন্ড জঙ্গিরা মাঝে-মধ্যে দু-একটি ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে। এসব জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের জন্য আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী এখনো প্রস্তুত আছে, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে।’