হলুদ সরিষা ফুলে বর্ণিল ভৈরব
সরিষা ফুলের হলুদ বর্ণে, বর্ণিল হয়ে উঠেছে ভৈরব। যেন হলুদ চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে এলাকার মাঠ-প্রান্তর। ফুলের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক বিমোহিত। মৃদু বাতাসের দোলায় সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে মৌমাছির মধু আহরণ। কৃষকের দুই চোখে জমেছে ভালো ফলনের স্বপ্ন।
কৃষক রেনু মিয়া, দীপু তালুকদার আর রিপন মিয়া জানান, স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে ভালো লাভ পাওয়ায় সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে ভৈরবের কৃষকরা। ফলে এখানে প্রতিবছরই আশাব্যঞ্জক হারে বাড়ছে সরিষার আবাদ।
কৃষকরা জানান, বীজ বোনার সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায় বলে বোরো আবাদের কোনো সমস্যা হয় না। সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া ছাড়া আর কোনো সারের প্রয়োজন পড়ে না এই ফসলের আবাদে। চারা গজানোর পর আগাছা পরিষ্কার ছাড়া তেমন কোনো শ্রমেরও প্রয়োজন নেই। প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।
কৃষক আসাদুজ্জামান, স্বাধীন মিয়া ও মো. রানা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় ছয় থেকে সাত মণ। বিক্রি করা যায় কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলে প্রতি বিঘা সরিষা আবাদে খরচ বাদে মোট লাভ দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তাই সরিষা চাষে দিন দিন তাঁদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষক মাহবুবুর রহমান উল্লাস জানান, তিনি প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেন। এ বছরও করেছেন ৪০ বিঘা জমিতে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সরিষার আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনামূল্যে বীজ-সারসহ নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
ভৈরব কৃষি বিভাগ জানায়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি কমিয়ে আনবে। সেই লক্ষ্যে সারা দেশের মতো ভৈরবেও কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আর মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই বিভাগের কর্মীরা।
গত অর্থবছরে ভৈরবে সরিষার আবাদ হয়েছিল দুই হাজার ২৫০ হেক্টর। চলতি বছরে আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫০৫ হেক্টর।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাশেতা আকন্দ বলেন, ‘সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সরিষার বাজারদরও দুই বছর ধরে ভালো। ফলে সরিষা আবাদে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমন ধান কাটার পর বোরো আবাদের আগে মধ্যবর্তী একটি লাভজনক ফসল হিসেবে এই সরিষার আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। ভোজ্যতেলে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষকদের বীজ-সার প্রণোদনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে কৃষিবিভাগ। ফলে বছর বছর এখানে সরিষার আবাদ বাড়ছে।’