হাঁড়িভাঙা আমের দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা
দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন বিদেশেও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে হাঁড়িভাঙা আমের। ভারত ও নেপালে এই আম উপহার দিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে। হাঁড়িভাঙা আমের দিন দিন মর্যাদা বাড়লেও ভালো নেই আম চাষিদের মন। আমের দাম কম থাকায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছে আম চাষিরা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকদিন আগে উপহার হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার, মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি প্রসাদ শর্মা অলিকে হাঁড়িভাঙা আম পাঠায়। এ কারণে নতুন করে হাঁড়িভাঙা আম আলোচনায় এসেছে। কিন্তু বর্তমানে দিনাজপুরের হিলিসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে হাঁড়িভাঙা আম। লকডাউনের মধ্যে আম বিক্রি করতে না পারায় অনেক আম পচে নষ্ট হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাষিদের কাছ থেকে কেনা আম খুচরা বিক্রি করতে লোকসান গুনতে হচ্ছে আম বিক্রেতাদের। এছাড়া দেশে চলমান লকডাউনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাইকারি বিক্রির সুযোগ কমে গেছে। পাশাপাশি ঘরবন্দি মানুষরা বাইরে বের হতে না পারায় বিক্রিও হচ্ছে কম। এসব কারণে বেশি পেকে নষ্ট হচ্ছে আম। তাই চাষিরা আরও লোকসানের আশঙ্কায় বাগান থেকে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে হাঁড়িভাঙা আম।
আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাহিলি বাজার, সিপি রোড, চারমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে এবং শহরের অলিগলিতে ভ্যানে হাঁড়িভাঙা আম সাজিয়ে বিক্রি করছেন অনেক চাষি ও খুচরা বিক্রেতারা। তাঁরা প্রতি কেজি আম বিক্রি করছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। আর বিভিন্ন ফলের দোকানে সাজিয়ে রাখা ভালো মানের হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
ভ্যানে করে ২৫ টাকা দরে আম বিক্রি করছিলেন নয়ন মিয়া। তিনি জানান, দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা বেশি করে আম কিনছেন। তবে লকডাউন ও গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় আম বিক্রি কমে গেছে।
হিলিতে আম বিক্রি করতে আসা রংপুরের পীরগঞ্জের চাষি জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান করেছি। এবার আমের দাম কম। আবহাওয়ার কারণে ফলনও কম হয়েছে। এতে করে লোকসানে পড়তে হবে। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম সরকার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে হাড়িভাঙা আম উপহার দিয়েছে। সরকার যদি আমাদের কাছ থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারত তাহলে আমরা ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পেতাম।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের চাষি রুহুল আমিন বলেন, ‘৩০ লাখ টাকায় আমের তিনটি বাগান ডেকে নিই। এবার লকডাউনের মধ্যে কোথাও আম পাঠাতে পারিনি। চাহিদাও কম। স্থানীয়ভাবে আম বিক্রি করে খরচের টাকা উসুল হবে কিনা চিন্তায় আছি। অনেক আম পচে নষ্ট হওয়ায় ফেলে দিয়েছি। তাই নিজে আম বিক্রির জন্য হিলিতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানেও দাম কম। মানুষজন ঘর থেকে বের হতে না পারলে আম কিনবে কেমন করে?’
হিলির চারমাথায় আম কিনতে আসা আমিরুল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে দাম কম হওয়ায় বেশি করে আম নিয়েছি। কারণ হাঁড়িভাঙা আম খুব সুস্বাদু। তাই ১০ কেজি আম ২৫০ টাকায় নিয়েছি।
বাংলাহিলি বাজারে আম কিনতে আসা সুমাইয়া আক্তার জানান, অন্য আম খেয়েছি, কিন্তু হাঁড়িভাঙা আমের মতো এতো মিষ্টি ও সুস্বাদু না। এবার দাম কম হওয়ায় বেশি আম নিয়েছি।’