হাওর এলাকায় বাঁধ রক্ষায় কৃষকদের প্রাণান্ত চেষ্টা
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার হাওরপাড়ের মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে। পাহাড়ি ঢলের পানি থেকে ফসল বাঁচাতে হাওর এলাকার কৃষক প্রাণপণ চেষ্টা করছে। জেলাটি হাওর অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে বছরে একটি মাত্র ফসল ফলে। আর এই ফসল ফলাতে হাওরপাড়ের মানুষকে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।
প্রথমে হাওর থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর ধান চাষ এবং শেষমেশ হাওরের ফসল রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত। তারপর যখন ধান গাছে ছড়া আসতে শুরু করে, তখন শুরু হয় আগাম বন্যা আর পাহাড়ি ঢলের আতঙ্ক। কোনো বছর ভাগ্য ভালো হলে বৃষ্টিপাত না হলে ফসল তোলা সম্ভব আর তা না হলে ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে সব ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ বছর সেই আতঙ্ক ভর করেছে। এরই মধ্যে গত তিন দিনে তিন উপজেলার বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাত দিন হাওরে হাওরে বাঁধের সঙ্গে যুদ্ধ করেও এই তিন উপজেলার কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তারপরও যেসব হাওরে এখনো পানি ঢুকেনি সেসব হাওরে মানুষ বাঁধ রক্ষায় রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে। রাতদিন সারাক্ষণ হাওর পাহারা দিচ্ছে এবং বাঁধের ফাটল মেরামত করতে সবাই হাওরে যে যার মতো অবস্থান করছে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ সময় মতো ব্যবস্থা নিলে এবং দুর্নীতি না হলে হাওর এলাকায় এমন হাহাকার আসত না। তাই হাওরের মানুষকে বাঁচাতে হলে সঠিক মানুষ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাওরের বাঁধের ক্ষতির কারণ জানতে তদন্ত কমিটি করা হবে। এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যারা যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, যারা কর্তব্যে অবহেলা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যদি সরকারি কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধি হন তাদের সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এবারও ২০১৭ সালের মতো সব হাওরের ফসল হারানোর আশঙ্কা করছে কৃষকরা। তবে এই অবস্থার জন্য কৃষকরা দায়ী করছে বাঁধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। বাঁধ নির্মাণের সময় সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন না করায় এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করায় ফসল কেটে গোলায় তোলার সময় এখন হাহাকার করছে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জানান, হাওরের বাঁধের ক্ষতির কারণ জানতে তদন্ত কমিটি করা হবে। এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যারা যারা দোষী সাবস্ত হবেন, যারা কর্তব্যে অবহেলা করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যদি সরকারি কর্মকর্তা হয়, জনপ্রতিনিধি তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর পিআইসি হলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা করে ধরে আনা হবে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থালা হাওর ও শাল্লা উপজেলার কৈয়ার বন্দর হাওরের বাঁধ ভেঙে আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসল রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হলে সর্বস্তরের মানুষ রাতে বাঁধ রক্ষার কাজে এসেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের কারণে আগাম বন্যায় প্রথম বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর একে একে সবকটি হাওরের বাঁধ ভেঙে শতভাগ ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।