হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে দুই গণশৌচাগার!
রাজধানীর জয়কালি মন্দির ও রাজধানী সুপার মার্কেট এলাকায় হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে দুই পিলারের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি গণশৌচাগার। উদ্বোধনের চার মাস হতে চললেও এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি। ব্যবহারের আগেই হানিফ ফ্লাইওভারের পিলার ও টয়লেটের মাঝখানে পানি ও ময়লা জমতে শুরু করেছে। এতে করে ফ্লাইওভারের পিলার ঘেঁষে গণশৌচাগার নির্মাণ করায় ফ্লাইওভারের পিলারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস গণশৌচাগার দুটি উদ্বোধন করেন। প্রায় ৫০ লাখ টাকা করে কোটি টাকা ব্যয়ে গণশৌচাগার দুটি নির্মাণ করে ডিএসসিসি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, শৌচাগারটিতে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা ব্লকে হাই কমোড, লো কমোড, গোসলখানা, ইউরিনাল ও বেসিনসহ অন্যান্য সুবিধা আছে। প্রতিবন্ধীদের ওঠার জন্য আলাদা র্যাম্প করা হয়েছে।
গণশৌচাগারের আশপাশের দোকানদাররা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর থেকেই দুটি গণশৌচাগার বন্ধ রয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গণশৌচাগার পরিচালনার জন্য ইজারা দেওয়া হবে। এরপর এ দুটি চালু করা হবে।
সরেজমিনে জয়কালি মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের গণশৌচাগারটির কেচিগেট তালাবদ্ধ। গণশৌচাগারটি দেখলেই বোঝা যায় নবনির্মিত, একেবারে ঝকঝকে-তকতকে। শৌচাগারের প্রবেশমুখে ঘুমাচ্ছে ভবঘুরে মানুষ। শৌচাগার বন্ধ থাকায় আশপাশে লোকজনের ভিড় ছিল না। পিলার ও এক তলাবিশিষ্ট এ শৌচাগারের মাঝখানের জায়গা এক হাতের দূরত্ব। এ জায়গায় পিলারের গোড়ায় পানি ও ময়লা জমছে। পাশে একটি গর্ত তৈরি হয়েছে।
দরজার পাশে টাইলসের নামফলক বসানো। তাতে লেখা : ৪ জানুয়ারি ২০২৩ শৌচাগারটি উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সহযোগিতায় ছিলেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। তত্ত্বাবধানে ৩৯ নং ওয়ার্ড কমিশনার রোকন উদ্দিন আহমেদ।
শৌচাগারের সাইনবোর্ড দেখে অনেকেই এলেও তাদের ফেরত যেতে দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পথচারী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি রাজধানীর সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসি। সাইনবোর্ড দেখে শৌচাগারে আসি। এসে দেখি তালা দেওয়া। সাইনবোর্ডে দেখলাম উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধন করে আবার তালা দেওয়া এটা কেমন নিয়ম!’
জয়কালি মন্দিরের গণশৌচাগারটির সামনে সুপার মার্কেট। সেখানকার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে শৌচাগার কখন খুলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই টয়লেট তো বন্ধ। চার মাস হতে চললো উদ্বোধন করা হয়। এরপর এক দিনও চালু করা হয়নি। রোজার মাসে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। শুনেছি পানি না থাকায় এটি বন্ধ আছে। সুপার মার্কেটের এই গলিতে একশরও বেশি দোকান। আমাদের প্রস্রাব-পায়খানা সারতে ঝামেলা পোহাতে হয়। পথচারী ও অন্যদের সমস্যাতো আছেই।’
রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে গণশৌচারগারটি মূলত পথচারি ও মার্কেটের লোকজনের কথা চিন্তা করেই করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পরও চালু না হওয়ায় এ রোজার মাসে অনেকে কষ্ট পাচ্ছেন। এ বিষয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এটি ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কথা চিন্তা করেই নির্মাণ করা। কিন্তু চালু না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
স্থানীয় ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ এ দুটি গণশৌচাগার নির্মাণ করেছে। ক্ষতির কোনো আশঙ্কা হলে ফ্লাইওভারের নিচে নির্মাণ করা হতো না। ইজারা নিয়ে জটিলতায় এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু জায়গা সংকট, তাই এটি করা হয়েছে। গণশৌচাগারগুলো ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এটি ইজারা হয়নি। আগামী সপ্তাহে পত্রিকার মাধ্যমে ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’
কাজ শেষ করার আগেই কেন উদ্বোধন করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইজারা না দিয়ে উদ্বোধন করা যাবে না, এরকম বাধাধরা কোনো নিয়ম নেই। উদ্বোধনের পাশাপাশি ইজারাদারের প্রক্রিয়াটাও রাখা উচিত ছিল। যেদিন উদ্বোধন, তার পরদিন থেকেই স্টার্ট, এটাই নিয়ম। এটা প্রশাসনিক বিষয়, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার বিষয়।’
সালেহ আহম্মেদ আরও বলেন, ‘রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কপোরেশনে তিনটি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সায়েদাবাদ এলাকারটি উদ্বোধনের পরই চালু করা হয়েছে। মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করেই এসব নির্মাণ করা। তবে রাজধানীর জয়কালি মন্দির ও রাজধানী সুপার মার্কেট এলাকায় নির্মাণ করা গণশৌচাগার চালু কি না আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আঞ্চলিক প্রকৌশলী বলতে পারবেন।’
সিটি কপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জয় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাজধানী সুপার মার্কেট এলাকায় এবং জয়কালি মন্দির দুটি গণশৌচাগার আমার তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে নিয়ম মেনে। এখানে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে নির্মাণ করা হলেও এর স্ট্রাকচার সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণশৌচারগারটি একতলা বিশিষ্ট হওয়ায় ফ্লাইওভারের স্ট্রাকচারের সাথে কোনো প্রকার সাংঘর্ষিক হবে না। গণশৌচাগার দুটির পানির লাইন সুয়ারেজের সাথে যোগ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ফ্লাইওভারের পিলারে নিচে পানি জমবে না।‘
উদ্বোধনের চারমাসেও ব্যবহার না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের পর সম্পত্তি বিভাগ এটি ব্যবহারের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দিয়ে থাকে। কিন্তু এখনো ইজারা কেন হয়নি তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বলতে পারবো।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর আবু সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ফ্লাইওভাররের পিলার সংরক্ষিত রাখা জরুরি। সেজন্য পিলারের আশপাশের জায়গা নিরাপত্তা বেস্টনি করে রাখা উচিৎ। গণশৌচাগার এক তলা হলেও হাজার হাজার মানুষের চাপ পড়বে এ গণশৌচাগারে। এতে করে কিছুটা হলেও পিলারে চাপ তৈরি হবে। আর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে না হলে পিলারের ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোনো সন্দেহ নেই।