হাসপাতালে কাটছে ঈদের দিন
পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ। সারা দেশ আজ মঙ্গলবার ঈদ উদ্যাপন করছে। কিন্তু, এর মধ্যেও অসংখ্য রোগী রয়েছেন, যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ উৎসবের দিনটি তাঁদের হাসপাতালেই কাটাতে হবে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা এ মানুষগুলোর মধ্যে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।
ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার সকালে ভর্তি হয়েছেন শাকিল হোসেন (৩০)। হাসপাতালের বেডে জায়গা হয়নি, বারান্দায় চলছে তাঁর চিকিৎসা। শাকিল হোসেনের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলায়। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ফরিদপুরে কর্মরত রয়েছেন।
শাকিল হোসেন বলেন, ‘সোমবার সকালে হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু, কিছুতেই বমি ও পায়খানা কমছে না। সঙ্গে রয়েছে পেট ব্যথা।
রোগী শাকিলের মা আফসানা বেগম বলেন, ছেলের অসুস্থতার কথা শুনেই চলে এসেছি। হাসপাতালেই কেটে যাবে ঈদ। তবুও ছেলে সুস্থ হোক, সামনের বছর ঈদ উদ্যাপন করব।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদী এলাকার বাসিন্দা আজিজ বেপারী। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার থেকে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ।
আজিজ বেপারী বলেন, ‘চার দিন ধরে ভর্তি রয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থ। সম্পূর্ণ ভালো হতে আরও কয়েক দিন লাগবে। এবার আর ঈদের আনন্দ করা হবে না। হাসপাতালেই থাকতে হবে। বাড়িতে ছেলেমেয়ে রয়েছে, আমার জন্য তাদেরও ঈদ করা হবে না।’
শুধুমাত্র শাকিল, আজিজই নন, ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন রোগী চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীদের সেবার কাজে নিয়োজিত সেবিকা গোলাপী বেগম জানান, ‘রোগী আসছে প্রচুর, জায়গা দিতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে অনেকেই ফ্লোর, বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেবা নিশ্চিত করতে।’
সেবিকা গোলাপী বেগম বলেন, ‘রোগীর চাপ থাকায় আমাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রোগীদের সঙ্গে আমাদের হাসপাতালেই ঈদ করতে হচ্ছে।’
ফরিদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গনেশ আগারওয়াল জানান, গত দেড় মাস ধরে ডায়রিয়া রোগী আসছে। তবে দুই দফা ডায়রিয়ার সংক্রমণের হার বেড়েছে। এবারের আক্রান্তের হার গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। প্রতিদিন গড়ে একশো’র ওপর রোগী ভর্তি হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র ১০ বেড রয়েছে। অন্যান্য ওয়ার্ডেও ডায়রিয়ার চিকিৎসা চলছে। তাতেও জায়গা সংকুলন হচ্ছে না, এ কারণে বারান্দায়ও রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, সদর হাসপাতালে অন্য রোগীদের সেবা সাময়িক স্থগিত করে সব ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা চলছে দিনরাত। এ বিপুল রোগীর সেবা দিতে নার্স ও চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, রোগীদের সেবা দিতে হাসপাতালে কর্মরতদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।