হাসপাতালে ১ মাসের শিশু রেখে মা-বাবা উধাও
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিশি নামের এক মাসের এক মেয়ে শিশুকে রেখে মা-বাবা উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও খোঁজ মেলেনি তার মা-বাবা বা কোনো অভিভাবকের। এ নিয়ে জেলাজুড়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। গত বুধবার (১ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালে শিশু নিশিকে ফেলা যায় তার মা-বাবা।
হাসপাতালে ভর্তির তথ্য মতে, নিশি জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার পাটাদহ ইউনিয়নের কয়রা এলাকার রকিব ও রোকসানা দম্পতির সন্তান।
জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হাসপাতালের ৭নং ওয়ার্ডে ২৬ দিন বয়সী শিশু নিশিকে ওজন কম এবং শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি করান রকিব-রোকসানা দম্পতি। পরে গত ১ মার্চ তাকে হাসপাতালের ৪তলায় শিশু ওয়ার্ডের করিডোরে অপেক্ষামাণ রোগীর এক স্বজনের কাছে দেন তার নানি। শিশুর মাকে নিচ থেকে আনবেন বলে হাসপাতালের নিচতলায় গিয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি বা শিশুটির মা-বাবা। তাঁদের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন রোগীর ওই স্বজন। পরে তিনি শিশুটির কোনো অভিভাবককে খোঁজে না পেয়ে বিষয়টি নার্সদের জানান।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা ভর্তির ফরমে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে অনেকবার কল করেও মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান। পরে শেখ রাসেল বিশেষায়িত নবজাতক সেবাকেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্স নিশির ওজন কম এবং শ্বাসকষ্ট দেখে তাকে সেখানে রাখেন। এখন সে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে সেখানে চিকিৎসাধীন।
জেনারেল হাসপাতালের নবজাতক সেবাকেন্দ্রের আয়া কোহিনূর বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে এক মহিলার কাছে বাচ্চাটাকে রেখে ওর নানি নিচ থেকে তার (নিশির) মাকে আনতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এরপর থেকে বাচ্চাটাকে ভিতরে নিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে।’
জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মাফিয়া সুলতানা বলেন, ‘গত বুধবার বিকেলে হাসপাতালের করিডোরে অপেক্ষমাণ রোগীর এক স্বজনের কাছে বাচ্চাটাকে রেখে ওর অভিভাবকরা পালিয়ে যান। ভর্তির সময় তাঁরা যে মোবাইল ফোন নম্বর ও ঠিকানা দেন আমরা ওই ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেউ মোবাইল ধরেন না।’
জেনারেল হাসপাতালের শেখ রাসেল বিশেষায়িত নবজাতক সেবাকেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. জান্নাত আরা মিলি বলেন, ‘কম ওজন ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। নবজাতকটি সুস্থ রয়েছে। তবে অভিভাবককে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের সহকারী পরিচালককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে বাচ্চাটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আগামী রোববার শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে শিশুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালে একটি মেয়ে শিশুকে ফেলে চলে গেছে তার মা-বাবা। আমরা বিষয়টি জানার পর ভর্তি হওয়া ফরমে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং যে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে—সেটিও শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’