হিফজুরই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন, দাবি পুলিশের
সিলেটের গোয়াইনঘাটে আলোচিত তিন খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফজুর রহমানই তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। পরে গতকাল শনিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
আজ রোববার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর হিফজুরকে বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে তাঁকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিলীপ কান্ত নাথ আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে গোয়াইনঘাট আমলী আদালতের বিচারক অঞ্জন কান্তি দাস হিফজুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ। তিনি জানান, সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওসি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হিফজুর সরাসরি জড়িত। বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসত। তাদের ঘরের বটি দিয়েই খুন করত না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফজুরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফজুর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।
জানা যায়, গত বুধবার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়ায় নিজের ঘর থেকে হিফজুরের স্ত্রী আলেমা বেগম (৩০), তাঁদের দুই সন্তান মিজান (১০) ও আনিছার (৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘর থেকেই হিফুজরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে হিফজুর পুলিশ পাহারায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিল পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয়। ওই রাতে মামার বাসায় থাকায় বেঁচে যায় ওই দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে আফসান।
জিজ্ঞাসাবাদ ও হিফজুরের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ওই দিন এ বাড়িতে কোনো বহিরাগত লোক প্রবেশের তথ্য বা আলামত পাওয়া যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং স্ত্রী ও দুই সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই হিফজুর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঘটনার আগের দিন সাহেববাজার এলাকার কালাগুলে আতা নামের এক মোল্লার কাছে যান হিফজুর। হিফজুর আতা মোল্লার মুরিদ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই মোল্লার কাছে আসা-যাওয়া করেন। ঘটনার দিন সেখান থেকে হিফজুর বাড়ি ফিরেন। স্ত্রীকেও ওই মোল্লার কাছে নিয়ে যেতেন তিনি। হিফজুর রহমান পান বিক্রি করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পানের টাকা সংগ্রহ করার জন্য তিনি বাজারে যেতেন। কিন্তু ওই দিন তিনি আর বাজারে যাননি। এমনকি ঘটনার ভোররাতে তিনি তিনজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফোনে। এর মধ্যে একজন অটোরিকশাচালক। তাঁর কাছে ফোন করে হিফজুর অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ ঘটনায় বুধবার রাতে হিফজুরের শ্বশুর আইয়ুব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় হিফজুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।