হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, সহানুভূতি আছে বিএনপির
আওয়ামী লীগের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শুরুতে সংগঠনটির কার্যক্রমে বিএনপি সমর্থন দেয়। তবে ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা করে সরকার। তবে সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের আবার দূরত্ব বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের একাধিক কর্মসূচিতে সহিংসতা হয়েছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের পাশাপাশি বিএনপিকেও দোষারোপ করা হয়। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকারই হেফাজতে ইসলামকে লালন-পালন করছে। প্রয়োজনে তারা হেফাজতকে ব্যবহার করে, আর প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলে দেয়। বর্তমানে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপে নিজেদের এমন অবস্থানই তুলে ধরেছেন বিএনপি শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যখনই দেশে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড হয়েছে তখনই কোনো তদন্ত ছাড়া তারা প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপিয়েছে। কখনও বিএনপি, কখনও ২০ দল, আবার কখনও হেফাজতকে তারা আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছে। যখনই কেউ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে, তখনই তারা এসব কূটকৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে।’
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “হেফাজতকে নিয়ে বিএনপি বা বেগম খালেদা জিয়া পল্টন ময়দানে কোনো সভা-সমাবেশ করেনি। হেফাজতকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হেফাজতের প্রয়াত নেতা শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছেন। অথচ এখন নানা ইস্যুতে হেফাজতের কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপির ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে।”
হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তারা আমাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয় না। তারা আমাদের নির্বাচনী সহযোগীও না। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং উপনির্বাচনগুলোতেও বিএনপি এককভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
তবে হাবিবুর রহমান হাবিব এও উল্লেখ করেন, ‘হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তাদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, আমরা সেটার প্রতিবাদ জানাই। নির্যাতিত মানুষের ওপর আমাদের সহানুভূতি আছে, থাকবে। তবে আমরা কারও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করি না।’
বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে-র ঘটনার সময় আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হেফাজতের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পানি, হালকা নাস্তা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। সেজন্য তাদের প্রতি আমাদের একটু সহানূভূতি আছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি তারা যে হরতাল পালন করেছে, সেটিতেও আমরা কোনো সমর্থন দেইনি। তবে ২৬ মার্চের আগে পরে সংঘর্ষে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিবাদে আমরা সমাবেশ করেছি।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের মাখামাখি সর্ম্পক। কী কারণে তাদের মধ্যে বৈরিতা তৈরি হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগই বলতে পারবে। প্রয়োজনে ব্যবহার আর প্রয়োজন শেষে দূরে ঠেলে দেওয়াই আওয়ামী লীগের চরিত্র।’
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি। বিএনপি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল, আর হেফাজত একটি ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজত ধর্মীয় রাষ্ট্রের চিন্তা করে। অন্যদিকে বিএনপি একক কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্রের চিন্তা করে না। বিএনপি সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে মিলিত একটি রাষ্ট্রের চিন্তায় বিশ্বাস করে।’ পাশাপাশি হেফাজত নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নকেও সমর্থন করেন না বলে জানালেন বিএনপির এই নেতা।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘বিএনপি কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নয় যে হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলবে। বিএনপি শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে তাঁর প্রণীত ১৯ দফার আলোকে রাজনীতি করে। সুতরাং হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের কোনো অবকাশ নেই। তবে শুধু হেফাজত নয়, যে কোনো রাজনৈতিক দল বা মানুষের ওপর দমন-পীড়নের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি।’
বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল। এখন নিজেদের চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তারা হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে। পাশাপাশি বিএনপিকেও দোষারোপ করছে।’
হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করে এর আগেও বক্তব্য দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘সরকারের নেতা, মন্ত্রী এবং অনেক সরকারি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে, বিএনপি হেফাজতকে ইন্ধন দিয়েছে, কর্মসূচি পালনে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি নয়, উসকানি দিয়েছে সরকার নিজেই।’