‘হেফাজত কারও তল্পিবাহক নয়, আল্লাহর রহমতে একাই যথেষ্ট’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘যদি কেউ মনে থাকেন বন্দুকের আঘাতে, বুলেটের চোখ রাঙানি দিয়ে হেফাজতকে নিস্তব্ধ করে দেবেন, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। এসব করে হেফাজতকে নিস্তব্ধ করা যাবে না।’
রাজধানীর বাইতুল মোকাররমে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতার সময় আজ শুক্রবার মাওলানা মামুনুল হক এ কথা বলেন।
আজ জুমার নামাজ শেষে ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ঢাকা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারিতে ১৯ জনকে হত্যা, কওমি মাদ্রাসায় হামলা, হয়রানি এবং সারা দেশে হেফাজতকর্মীদের ওপর সরকারি বাহিনী ও নির্যাতন গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘হেফাজত কারও তল্পিবাহক নয়। মনঃপুত না হলেই বলবেন, আজ বিএনপি অথবা কাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেছে- তা হবে না। হেফাজত নিজস্ব শক্তিতে আল্লাহর রহমতে একাই যথেষ্ট। যখনই দেশের বিরুদ্ধে, ঈমান-আকিদার বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে- তখনই হেফাজত কারও রক্তচক্ষু পরোয়া না করে রাজপথে নেমে আসবে।’
মাওলানা মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আজকে প্রশ্ন করতে চাই- সরকারি দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপিরা, প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তারা মিডিয়াতে ব্রিফিং করছেন- ওখানে এতগুলো সরকারি অফিস-আদালত পুড়ে গেল, ওখানে এতগুলো কাগজপত্র পুড়ে গেল, মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেল, কত আহাজারি, কত কান্না তাদের। কিন্তু, পাখির মতো গুলি করে ২০ তাজা প্রাণ হত্যা করলেন, আমার ২০ মায়ের কোল খালি করলেন। মাননীয় আইজিপি সাহেব, আপনার মুখ থেকে তো একবারের জন্যও এই ২০ জন শহীদের জন্য এতটুকু সমবেদনা প্রকাশ করতে দেখেনি। আপনাকে আইজিপি নিয়োগ করা হয়েছে এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, জনগণকে গুলি করে হত্যা করার জন্য নয়।’
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ওহ, এরা তো বাংলাদেশি নাগরিক নয়, ওরা তো হেফাজতে ইসলামের কর্মী- এই যদি হয় আপনাদের ভাবনা, এই যদি হয় আপনাদের চিন্তা, তাহলে মনে রাখবেন আগামীর বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের বাংলাদেশ।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কল্পিত তাণ্ডবের গল্প বলছেন। সারা দেশের হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের কারাগারে বন্দি করে রাখছেন। আর যে অমানবিক আচরণ আমাদের কর্মীদের সঙ্গে করা হয়েছে, আমি মানবাধিকারের জায়গা থেকে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রশাসন ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই- তদন্ত করুন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। পুলিশের হেফাজতে থানার গারদে ঢুকে হেফাজতের কর্মীরা আজ হেলমেট লীগের হাত থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না।’
মামুনুল হক বলেন, ‘গত শুক্রবার ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে হেলমেট লীগ কলঙ্কিত করল। সারা দেশে এত তাণ্ডবের গল্প, এত মামলা, এত গ্রেপ্তার... যুবলীগ-ছাত্রলীগের কোনো সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হয়েছে কি না জানতে চাই। আমি আরও দাবি করতে চাই- ভিডিও ফুটেজ, সিসি ক্যামেরা, সাংবাদিকদের ক্যামেরা এবং জনগণের সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল এই ছবিগুলো বাইতুল মোকাররম থেকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া—সব যাচাই করুন। যারা বিনা উসকানিতে হেফাজতের কর্মীদের ওপর হামলা করেছিল, তারা কেন নিরাপদে থেকে এখনও মাস্তানি করে বেড়াচ্ছে?’
‘কওমি মাদ্রাসায় থাকা কোরবানির ছুরিগুলো দিয়ে কী করা হয় আপনারা জানেন না? আপনারা কুরবানির চামড়া নিয়ে যা শুরু করেছেন, আগামী দিনে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা বিনামূল্যে যে সেবা দেয়, তা হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে। তখন হয়তো আমরা কোরবানির ছুরিগুলো সংরক্ষণ করব না। এই ছুরিগুলো দেশের কল্যাণ ও কোরবানির কাজে নিয়োজিত। আর সেই ছুরিগুলো নিয়ে আপনারা নাটক করেন। এই নাটক তো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে’, যোগ করেন মামুনুল হক।
মামুনুল হক বলেন, ‘মিডিয়ার কর্মীদের বলব, মিডিয়াকে লক্ষ্য করে বলব, আপনারা যতই ক্ষমতাবান হোন, যতই শক্তিশালী হোন, পরিবেশ-পরিস্থিতি যতই নিয়ন্ত্রণ করুন, মনে রাখবেন আল্লাহর চেয়ে বেশি শক্তি আপনাদের নেই। আজ ইসলামের বিপক্ষে আপনারা অবস্থান গ্রহণ করছেন। আপনারা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সরকার দলীয় সন্ত্রাসী-এমপির বিরুদ্ধে নিউজ করতে পারেন না। যারা আমাদের ওপর বিনা উসকানিতে হামলা করল, আমার ভাইদের হত্যা করল- আপনারা তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করতে পারেন না। আপনারা পারেন হেফাজতে ইসলামের কল্পিত তাণ্ডব রচনা করতে। আপনাদের অনুরোধ করি, ২০১৩ সাল থেকে তো হেফাজতে ইসলামকে মাইনাস করার চেষ্টা করছেন। হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে জাতির কাছে নেগেটিভ তথ্য উপস্থাপন করার আপনারা যত চেষ্টা করছেন, কোনো কাজ হচ্ছে না। হেফাজতের জোয়ার বইছে। আপনাদের কাছে যদি পত্র-পত্রিকা থেকে থাকে, আমাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে। জনগণকে আগের দিনের মতো এত বোকা ভাববেন না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেশ করুন। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে হয়তো কেউ ভুলক্রমে বা আবেগের বশবর্তী হয়ে সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ করে থাকতে পারে, কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা সেটা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আপনারা হেফাজতে ইসলামকে বয়কট করলেন। আপনারা যদি ইসলামকে বয়কট করেন, যদি হেফাজতে ইসলামকে বয়কট করেন, মনে রাখবেন- এই জনতা আপনাদেরকে বয়কট করবে। মিডিয়া এর আগে দেশ-জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। আমরা চাই, সরকারের সমালোচনা করুন, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন।’
রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় গত শুক্রবার পুলিশ, সরকার সমর্থক নেতাকর্মী ও মুসল্লিদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। গত শুক্রবার দুপুর দেড়টা থেকে থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত। এ ঘটনায় অন্তত ৬০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।