হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর জয়যাত্রা টিভি কার্যালয়ে অভিযান
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর রাজধানীর মিরপুরে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ও জয়যাত্রা আইপি টিভির অফিসে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ।
অভিযান শেষে নাদির শাহ জানান, জয়যাত্রা টেলিভিশনের কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে টেলিভিশনটি বন্ধ করা হতে পারে। টেলিভিশনটিতে কর্মী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগও তদন্ত করা হচ্ছে।
এর আগে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে র্যাব। এ সময় বাসা থেকে বিদেশি মদ ও মুদ্রা, হরিণের চামড়া, ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ওয়াকিটকি সেট এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে গুলশান ২ নম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের পেছনে ৩৬ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসায় এ অভিযান চালানো হয়। প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু এসব তথ্য জানান।
পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে বিদেশি মদ, বিদেশি কারেন্সি, হরিণের চামড়া, ক্যাংগারুর চামড়া, ওয়াকিটকি সেট এবং ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পশু সংরক্ষণ আইন ছাড়াও তাঁর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে।’
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান পলাশ কুমার বসু।
গত রোববার আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ হতে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’
জানা যায়, নানা বিষয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠন করেন। এতে নিজেকে সভাপতি এবং মাহবুব মনিরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এই সংগঠনে জেলা-উপজেলা ও বিদেশ শাখায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার পর ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
সংগঠনটির দাবি, গত দুই-তিন বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
গত সোমবার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে ফেসবুক লাইভে এসে একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “পুরুষেরা এত খারাপ কেন? সব পুরুষ নয়, কিছু কিছু কাপুরুষ, এত খারাপ। মেয়েদের পেছনে লেগে থাকে, লজ্জা করে না আপনাদের মেয়েদের পেছনে লেগে থাকতে। মেয়েরা না মায়ের জাতি? মা না থাকলে আপনারা জন্ম হতেন না। সেই মেয়েদের আপনারা অপমান করেন, লেলিয়ে দেন—‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের পেছনে লাগো’।”
হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি সরকারের জন্য একটা চ্যানেল চালাচ্ছি। সেটা জয়যাত্রা টেলিভিশন। সেই চ্যানেল আমি ভতুর্কি দিয়ে চালাচ্ছি প্রায় চার বছর যাবৎ। আমি চ্যানেলের বাইরে কোনো কাজ করতে পারি না, এত মনোযোগ দিতে হয় আমাকে।’