১৮ ঘণ্টা আগেই মেঘনায় জেলে নৌকা!
লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষের ১৮ ঘণ্টা আগেই নৌকা ভাসিয়েছে জেলেরা। আজ শুক্রবার ভোর ৬টা থেকেই নদীতে জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টায় কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নে লধুয়া এলাকায় নদীতে বিপুল জেলে নৌকা দেখা যায়।
এ সময় সেখানে প্রশাসনের কাউকেই দেখা যায়নি। প্রচুর নৌকা একসঙ্গে নদীতে নামায় শেষ দিন অভিযান পরিচালনা সফল করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ভোর থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে জেলেরা দলবেধে নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে নেমেছে। নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সবাই জানে। এর পরও একসঙ্গে অনেকেই নদীতে নৌকা ভাসিয়েছে। কয়েকদিন হলো ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শেষ হয়েছে। এতে নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়ার আশায় তারা ১৮ ঘণ্টা আগেই নদীতে জাল ফেলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন শতাধিক নৌকা লুধুয়া এলাকায় মেঘনার কূলে নোঙর করে রাখা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে জেলেরা জাল বুনেছে। আজ সকাল থেকে অনেককে নৌকার ত্রুটি সারতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার আগেই তাদের নৌকা সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। রাতে উৎসাহ-উদ্দীপনার নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলেরা নদীতে নামবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মা ইলিশ সংরক্ষণে রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। গত ৭ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে আজ ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত (১২টা) পর্যন্ত সরকারি এ নিষেধাজ্ঞা ছিল।
এ সময়ে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ ২৪৩টি যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগরে ৫২ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এতে ২১ মামলায় ২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল এবং দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এ সময়ে জব্দ করা ৪১৬ কেজি ইলিশ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। নিষেধাজ্ঞাকালে ২১ লাখ ১৬ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। জালগুলোর বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ জেলার ৪৩ হাজার ৭৭২ জন জেলে রয়েছে। এরমধ্যে নিষেধাজ্ঞাকালে এবার প্রায় ৪০ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরা চাল বিতরণ করেছে। তবে, চরমার্টিন, চরফলকনসহ নদী তীরবর্তী কয়েকটি স্থানে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কমলনগরের লুধুয়া এলাকার কয়েকজন জেলে জানায়, সরকার যে চাল দেয় তা তারা সময়মতো পায় না। এজন্য বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে তারা চুরি করে নদীতে মাছ শিকারে যায়। সেখানেও ধরা পড়লে জেল-জরিমানা দিতে হয়। সময়মতো চালগুলো বরাদ্দ দিলে জেলেরা নদীতে নামত না বলে জানিয়েছে তারা।
জেলে আবদুর রহমান, আমান উল্যাহ, সাদেক উল্যাহ জানিয়েছেন, তারা সরকারের পক্ষ থেক ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছেন। সরকারি নির্দেশনা মেনেই তারা রাতে মেঘনায় মাছ শিকারে যাবেন।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘আমরা নদীতে অভিযানেই ছিলাম। অভিযান টিমে ছয়জন কোস্টগার্ড ও আমিসহ চারজন স্টাফ ছিলাম। উপজেলার অধীনে ১৫ কিলোমিটার নদী এলাকায় সকাল থেকেই নৌকা ভাসিয়ে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। প্রচুর পরিমাণ নৌকা ভাসছে নদীতে। স্বল্প সংখ্যক লোক নিয়ে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।’
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এর আগে নদীতে নৌকা ভাসানোর আইনত দণ্ডনীয়। ভোর পর্যন্ত কোনো নৌকা নদীতে নামেনি। আমরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি। কমলনগরের লুধুয়া এলাকায় নদীতে নৌকা নামিয়ে মাছ শিকারের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’