২০২০ সালে সড়কে ঝরেছে ৬৬৮৬ প্রাণ, রেলপথে ৩১৮ মৃত্যু
গেল বছর সারা দেশে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ছয় হাজার ৬৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরো আট হাজার ৬০০ জন। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে লকডাউন চলাকালে দুই মাসের বেশি সময় রাস্তায় গণপরিবহণ না থাকার পরও ২০১৯ সালের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানোসহ দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি। এ সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ শনিবার প্রেসক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে সর্বাধিক ৫০০টি ও সর্বনিম্ন ২০১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সর্বাধিক ৫৮৬ থেকে সর্বনিম্ন ২১১ জন মানুষের।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জানান, গত বছর দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ৩৯২ পথচারী, ১৫ সেনা সদস্য, ৫২ পুলিশ, ১৫ আনসার সদস্য, এক র্যাব সদস্য, দুই বিজিবি সদস্য, এক সিআইডি সদস্য, এক নৌ-বাহিনী সদস্য, এক বিমানবাহিনী সদস্য, পাঁচ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৬৫৬ নারী, ৪১৮ শিশু রয়েছে এবং ৩৭৫ শিক্ষার্থী রয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৩৯০ চালক ও ৩৫৫ পরিবহণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের বরাত দিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন পঙ্গুত্ব বরণ করে।
বছরজুড়ে দুর্ঘটনায় মোট ছয় হাজার ৭৩৬টি যানবাহনের ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ বাস, ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান এবং ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল।
দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনা রোধে ১২ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সুপারিশগুলো হলো-
১. সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করা।
২. আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।
৩. সড়ক নিরাপত্তায় এরই মধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।
৪. সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মহাসড়কের উভয় পাশে ১০ মিটার খালি রাখার বিধান বাস্তবায়ন করা।
৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক চিহ্ন (রোড সাইন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করা।
৬. গণপরিবহণ চালকদের পেশাদারিত্বের প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. সড়ক পরিবহণ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮. গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের সনদ দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করে হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
১০. দেশব্যাপী চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহণ নামানোর উদ্যোগ নেওয়া।
১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়ে তোলা।
১২. গণপরিবহণে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন গণপরিবহণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।