২৬ বছর পর জাপানেতা কাশেম হত্যার রায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড
২৬ বছর পর বহুল আলোচিত জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার রায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ছয়জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় দেন। মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত একমাত্র আসামি তারেক হোসেন (৪৫) পলাতক রয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্রে তারেককে একজন চরমপন্থী নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আরিফ মাহমুদ লিটন দুপুরে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, মামলার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে আলহাজ আবদুল গাফফার বিশ্বাস একাই উপস্থিত ছিলেন। তারেক হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হয়েছে।
১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল শেখ আবুল কাশেম ও তাঁর গাড়িচালক মিখাইলকে খুলনা থানার সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সিআইডি পুলিশ তদন্ত শেষে ১৯৯৬ সালে ৫ মে ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে বারবার এই মামলার শুনানি স্থগিত হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশেই গত ১ মার্চ পুনরায় শুনানি শুরু হয়।
অভিযোগপত্রের ১০ আসামি হলেন জাপা নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ আবদুল গাফফার বিশ্বাস, জাপা নেতা মোশফেকুর রহমান মোসফেক, তাঁর তিন ভাই আনিসুর রহমান মিল্টন, মফিজুর রহমান ও ওছিকুর রহমান ওসিক, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র ইখতিয়ার উদ্দিন বাবলু, শিল্পপতি মনির হোসেন, বিএনপিনেতা তরিকুল হুদা টপি ও তারেক হোসেন।
মামলা চলাকালে সাবেক ডেপুটি মেয়র ইখতিয়ার উদ্দিন বাবলু ও শিল্পপতি মনির হোসেন মারা যান। এ ছাড়া জাপানেতা মোশফেকুর রহমান মোসফেক, তাঁর তিন ভাই আনিসুর রহমান মিল্টন, মফিজুর রহমান, ওছিকুর রহমান ওসিক ও বিএনপিনেতা তরিকুল হুদা টপি পলাতক রয়েছেন। আর একজন আসামিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শেখ আবুল কাশেম হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর মেয়ে অনামিকা অনু কিশোরী ছিলেন। তিনি আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। অপরদিকে জাপানেতা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গাফফার বিশ্বাসকে নিয়ে তাঁর সমর্থকরা উল্লাস করে।
এদিকে চরমপন্থি নেতা তারেক হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
‘হত্যামামলাকে হত্যা করা হয়েছে’
রায়ে আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিহত শেখ আবুল কাশেম তখন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি সেই সময় খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তিনি ও তাঁর গাড়িচালক মিখাইল প্রকাশ্য দিবালোকে খুলনার জনবহুল এলাকায় এবং খুলনা থানার সন্নিকটে নির্মম ও নৃংশসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অবশ্যই এটি একটি আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা।’
‘কিন্তু দীর্ঘ ২৬ বছরের মধ্যে মামলাটির বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া নজিরবিহীন ও দুঃখজনক ঘটনা এবং বিচার বিভাগের জন্য লজ্জাজনক বিষয়—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মামলাটির কেন বিচার নিষ্পত্তি হতে এত বিলম্ব হলো, সেটি গবেষণার জন্য পৃথক একটি কেস স্টাডি হতে পারে।’
আদালত আরও বলেন, ‘এই মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নথি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মার্ডার কেসের সঙ্গে সঙ্গে কেস মার্ডার নামক আর একটি ধারণা বাস্তবতা পেয়েছে। (মানে, হত্যা মামলারটি হত্যা করা হয়েছে।)’