২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল আইন বাতিল চায় নাগরিক সমাজ
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এই দাবিতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করে। এই পদযাত্রা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়।
এ সময় সেখানেই এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। এর মধ্যে আইনটি বাতিল করা না হলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
এর আগে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা, ভাষানী অনুসারীসহ কয়েকটি সংগঠন এই কর্মসূচির আয়োজন করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে দুপুর ২টার দিকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে তাদেরকে বাধা দেয় শাহবাগ থানার পুলিশ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাবেশের সভাপতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম, কবি ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক সেলিম খান, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সরকারের অত্যাচার ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। এই কালো আইনটির অপব্যবহারের চরম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে লেখক মুশতাক আহমেদের কারা হেফাজতে মৃত্যু। মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এই আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো সংশোধনের জন্য বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সরকার এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বরং এর অপব্যবহার বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘লুকোচুরি বন্ধ করেন। আজকে আমাদের দাবি একটাই হতে হবে, কোনো লুকোচুরি নয়। তাঁকে বাতিল করে দিতে হবে। সংস্কারের দরকার নাই। সংস্কার একটা ধাপ্পাবাজি।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এক মাঘে শীত যাবে না। পুলিশ হোক আর যাই হোক, বাতাস বদলাচ্ছে। আপনাদেরকেও বদলাতে হবে। ওই বঙ্গবভনে-গণভবনে যারা আছেন তাঁরাও বদলে যাবেন। শুধু সময়ের ব্যাপার।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই আইনের মাধ্যমে নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে অপরাধে পরিণত করা হয়েছে। এই অধিকারের জন্যই কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন।’
পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এই আইন কীভাবে যৌক্তিক হতে পারে? এত ভয় কিসের? একটা কথা বললেই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়ে যায়! এত ভয় কীসের? ভাবমূর্তিটা কী, শুনি আমরা একটু। আপনারা বলে দিন, ভাবমূর্তি হচ্ছে- এটা এটা এবং এটা। তাহলে আমরা বুঝব ভাবমূর্তি কী? একটার পর একটা ইলেকশন ভোটারবিহীন হয়, ১৫ ভাগ মানুষ ভোট দিতে যায়, সেগুলো ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে না।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার দেশের মানুষের মুখ বন্ধ রাখার জন্য এই জঘন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এটি সংবিধান পরিপন্থী। এই আইন মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে।’
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘আজকের এই কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা প্রমাণ করে এই সরকার স্বৈরাতান্ত্রিক। নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে তারা অবৈধভাবে পুলিশি ব্যবস্থা কায়েম করেছে। কিন্তু আমাদের ওপর যতই বাধা-বিঘ্ন আসুক না কেন আমরা এর প্রতিবাদে লড়ে যাব।’