‘২৬ মার্চ মোদির সফরবিরোধী কর্মসূচি ছিল না হেফাজতের’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরবিরোধী হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না।’
গতকাল সোমবার রাতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের আমির। এ সময় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন তিনি।
ভিডিও বার্তায় জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, কিছু বক্তা মোদির সফর নিয়ে কথা বললেও মোদি আসার ব্যাপারে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না।
‘অথচ মোদির সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ জুমার দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু দুর্ঘটনা হয়েছে। ২৬ মার্চ হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমাদের কোনো কমান্ড ছিল না। আমি নিজেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছিলাম না। দূরে সফরে ছিলাম। বায়তুল মোকাররমেও কিছু মুসল্লি ও ক্যাডারদের মাঝখানে কিছু অঘটন হয়ে গেছে। ক্যাডাররা মুসল্লিদেরকে মারধর করেছে মসজিদের ভেতরে। এরপরে, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হয়েছে। এজন্য আমরা বেশি দুঃখিত। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও কিছু ঘটনা হয়ে গেছে। মোট কথা হলো, এসব কোনো ঘটনায়ই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মসূচি ছিল না, কোনো কমান্ড ছিল না’, বলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
হেফাজত মহাসচিবের প্রেসসচিব ইনামুল হাসান ফারুকী ভিডিও বার্তাটি সংবাদমাধ্যমে পাঠান।ভিডিও বার্তায় বাবুনগরী হেফাজতে ইসলামকে অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করে সংগঠনটি সম্পর্কে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে সংঘাত ও ভাঙচুরে না জড়াতে বলেছেন।
২০ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় বাবুনগরী বলেন, ‘২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা হেফাজতের প্রায় ১১ বছরে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না, কোনো পার্টির সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক ছিল। হেফাজত শান্তি-শৃঙ্খলা চায়। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। কোনো পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। হেফাজতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর জমিনে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এই হল হেফাজতের অবস্থান।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হেফাজত আমির বলেন, ‘ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম নয়, শান্তির ধর্ম। নৈরাজ্য, অশান্তি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আমরা চাই না। আপনারা ধৈর্য ধরুন এবং সবর করুন। কোনো সংঘাতে যাবেন না। ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করবেন না। ইসলাম কখনো জ্বালাও-পোড়াও বিশ্বাস করে না; বরং এগুলোকে হারাম মনে করে। দেশের শান্তি কামনা করে এ রমজান মাসে সকল প্রকার বালা মসিবত ও আপদ-বিপদ দূর হওয়ার জন্য সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। এটা আপনাদের প্রতি আমার নসিহত।’
বাবুনগরী বলেন, ‘মাহে রমজানে প্রশাসন হেফাজতের ওলামাদের, ছাত্রদের, তৌহিদী জনতাকে হয়রানি করছে। মানুষ ঘরে ফিরতে পারে না। বাইরে বাইরে ঘুরতে হচ্ছে। সেহরির সময়, ইফতারের সময় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মাওলানা বশিরউল্লাহকে তারাবি নামাজের সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। এ হল এখনকার অবস্থা। মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মামুনুল হক, মাওলানা মঞ্জুরুল হকসহ ওলামা, তৌহিদী জনতা, ছাত্রজনতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সরকারের উদ্দেশে হেফাজত আমির বলেন, ‘২০১৩ সালের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে, আট-নয় বছর পর। ২০১৩ সালের মামলা ডাহা মিথ্যা। এসব মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরও মুক্তি দান করুন।’