৫০ হাজার টাকা না পেয়ে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
হৃদরোগে আক্রান্ত আট মাসের শিশুর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে স্বামী-সন্তানসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যান ওই নারী। পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ জোগানোর বিষয়টি জেনে তাঁদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন গ্রেপ্তারকৃত আশিক ও তাঁর সহযোগীরা। এ অর্থ না দেওয়ায় ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
র্যাব বলছে, চাঁদার টাকা না পেয়ে ওই নারীকে সুগন্ধা সৈকত থেকে জিম্মি করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নেওয়া হয় একটি চায়ের দোকানে। সেখান থেকে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে নিয়ে সৈকত এলাকার আশিকসহ অপরাধী চক্রের সদস্যরা ধর্ষণ করেন।
কক্সবাজারে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি আশিককে মাদারীপুর থেকে গতকাল রোববার রাতে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ওই নারী আশিকের পূর্বপরিচিত ছিলেন না। ঘটনার এক দিন আগে সৈকতে তাঁদের পরিচয় হয়। সন্তানের চিকিৎসার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে আশিকদের নজরে পড়েন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ওই নারীকে অপহরণের পর তাঁর স্বামী র্যাব–১৫–এর কাছে উদ্ধারে সহায়তা চান। র্যাব তাঁর স্বামীকে নিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিম্মি করার সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮ ও ১৫–এর অভিযানে গতকাল রাতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিককে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন দাবি করে কমান্ডার মঈন বলেন, আশিক কক্সবাজারে পর্যটন এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র চালান। এ চক্রের সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫। ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তিনি। তিনি ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
র্যাব আরও জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন আশিক। তাঁর নামে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা আছে। পাঁচবার পুলিশ আশিককে গ্রেপ্তার করেছে। আশিকের নেতৃত্বে চক্রটি পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আশিক বিভিন্ন হোটেলে ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে যোগসাজশে পর্যটকদের বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন। এর আগে এক পুলিশ সদস্যকেও ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করেন তিনি।