৫৫ পৌরসভায় প্রচার শেষ, ভোট রোববার
চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে রোববার। ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ শুক্রবার মধ্যরাতে প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচার শেষ হয়েছে। ভোটগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৫৫ পৌরসভার এ ভোট নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি শঙ্কা-উৎকণ্ঠাও রয়েছে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে। আগের রাতে সিলমারা ঠেকাতে ভোটগ্রহণের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠাবে ইসি। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান আরজু শুক্রবার রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ ধাপে ২৬ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে এবং ২৯ পৌরসভায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।’
তবে প্রচারের শেষ মুহূর্তের কিছু ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। শেষ দুদিনের প্রচারে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষ ও অফিস ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ ও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগেও প্রচার নিয়ে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভায় দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দুটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারে বাধা দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী কেন্দ্র দখলের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা। এ ধাপের নির্বাচনি লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি মেয়র পদে লড়ছেন বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীও। উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে যেমন রয়েছে উত্তেজনা, তেমনি শঙ্কাও রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে। আর এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ নির্বাচন কমিশনও (ইসি)।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত রেখে কাজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে।’ ইসির আশা, সামনের নির্বাচনগুলো ভালো ও সুষ্ঠু হবে, হবে না সংঘাত।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘সম্প্রতি ভোটারদের ভোটবিমুখতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। নির্বাচনে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন।’
এদিকে নির্বাচনি পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য টহল শুরু করেছে শুক্রবার থেকেই। চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কমিশনের শেষ মুহূর্তের নির্দেশনায় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল পাঠাতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার বেশ কয়েকটি ধাপে পৌরসভা নির্বাচন করছে কমিশন। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ভোট হয়। তৃতীয় ধাপে ৬৩টি পৌরসভায় ভোট হয় ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে ৫৭ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও দুটি পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়।